ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুই বছর পর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়া মানবাধিকারের লঙ্ঘন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২০
দুই বছর পর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়া মানবাধিকারের লঙ্ঘন

ঢাকা: ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দুই বছর পর জমা দেওয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর।

বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদের অফিসে এসে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন তিনি।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেতে দুই বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করা প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকারের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর বলেন, আমরা ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললাম। তিনি বলছেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের এখানে এসে তদবির করে নিয়ে যেতে হয়, নইলে প্রতিবেদনটি মিসিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখছি পুলিশ কেন এতদিন প্রতিবেদনটি নিল না, আর ফরেনসিক বিভাগই কেন নিজ দায়িত্বে পাঠালো না।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনটি দিতে সিরিয়াল মেইনটেন করা হয়নি। ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের ব্যাখ্যাটাও আমরা বিবেচনা করব। দেরি হওয়ার কারণ থানা পুলিশের নাকি ফরেনসিক বিভাগের তাও খতিয়ে দেখব।

ময়নাতদন্তর প্রতিবেদন পেতে তদবির কেন করতে হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক বলেন, এটা ওনাদের বক্তব্য, এটা সরকারি বিধিমালা বা এমন কোনো নিয়ম নেই। সরকারি কোনো কাজ রিসিভ করলে তা পাঠানোর দায়িত্ব তার। প্রাথমিকভাবে ফরেনসিক বিভাগ তাদের লোকবলের দোহাই দিচ্ছে। আমরা সবকিছুই তদন্ত করে দেখব।

আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর বলেন, মৃত নারীর ছেলে আমাদের কাছে তার জবানবন্দিতে বলেছেন—তিনি বারবার ফরেনসিক বিভাগে এসেছেন। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখানো হয়েছে তাকে। আমরা আগামী রবি বা সোমবার শাহবাগ থানায় যাব, থানা পুলিশের বক্তব্য শুনব। প্রতিটা সরকারি কাজে প্রতিবেদন, চিঠি যথাসময়ে পাওয়ার অধিকার প্রতিটা নাগরিকের রয়েছে। এই ভুক্তভোগীর পরিবার যেহেতু যথাসময়ে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনটি পায়নি তাহলে অবশ্যই এখানে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে আমি প্রাথমিকভাবে মনে করছি।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দিতে কেন দুই বছরেরও বেশি সময় লাগলো এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, রওশন আরা নামের ওই নারীর মরদেহটি আমাদের কাছে যখন আসে ময়নাতদন্ত শেষে তখনই আমরা মৃতের পরিবার ও সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেছিলাম। মরদেহে কী পাওয়া গেছে ও কী পাওয়া যায়নি তা সবাইকে জানিয়েছিলাম। মরদেহে একটি কিডনিও পাইনি। আমরা যদি মিডিয়ার সামনে তখনই সব বলে দিতে পারি তাহলে আমাদের এখানে লুকানোর কী থাকবে? আমি মনে করি আমাদের দেওয়া রিপোর্ট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে সমস্যা এটা যে, রিপোর্টটা দিতে দেরি হয়েছে। এখানে আমাদের বিভাগে লিমিটেশন আছে, আমরা সারা দেশের ময়নাতদন্ত করি, রিপোর্ট দেই। ছাত্রদের পড়াতে হয়, পরীক্ষা নিতে হয়। সারা দেশে কোর্টে গিয়ে আমাদের বিভাগের চিকিৎসকদের সাক্ষী দিতে হয়। অল্পসংখ্যক লোক দিয়ে কাজ করি।

ডা. সোহেল মাহমুদ আরও বলেন, রিপোর্টটি দিতে আমাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি ছিল না। ডা. কবির সোহেল, ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ও আমিসহ ৩ সদস্যের কমিটি করে ময়নাতদন্ত করি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ডা. কবির সোহেল বরিশালে বদলি হয়ে যান। আর হিস্টোপ্যাথলজি থেকে রিপোর্ট আসতে এক বছর দেরি হয়। হিস্টোপ্যাথলজি থেকে রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় আমাদের প্রতিবেদনটি দিতে দেরি হয়। পরে নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে রেখেছি, পুলিশ আসার পর পুলিশের কাছে দিয়েছি।

মৃত রওশন আরার ছেলে বারবার ফরেনসিক বিভাগে ঘুরেও প্রতিবেদন পাননি—এ প্রসঙ্গে ডা. সোহেল বলেন, আমরা রিপোর্টটি পুলিশের কাছে দেই। পরিবারের কাছে দেই না। সব মিলিয়ে এই রিপোর্টের বিষয়ে আমাদের কোনো গাফিলতি ছিল না, সিস্টেমের জন্য দেরি হয়ে গেছে। হিস্টোপ্যাথলজি পেতে দেরি হওয়া, ডাক্তার বদলি হয়ে যাওয়া ও পুলিশ রিপোর্টটি নিতে দেরি করে ফেলেছে।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তে মরদেহে দুইটা কিডনির অস্তিত্ব ছিল, সার্জিক্যালি অ্যাবসেন্স ছিল কিডনি দুইটা। মাথায় টিউমার ছিল। টিউমারটি আমরা হিস্টোপ্যাথলজিতে পাঠিয়েছিলাম। ভিসেরা সংগ্রহ করেছিলাম। ওই নারীর হার্ট সাধারণ আকারের চেয়ে বড় পেয়েছি। প্রতিবেদনে আমরা উল্লেখ করেছি ‘সার্জিক্যালি বোথ কিডনি অ্যাবসেন্স’।

২০১৮ সালে বিএসএমএমইউতে রওশন আরা নামের ওই নারীর মৃত্যু হয়। তার ছেলে রফিক সিকদার অভিযোগ করেন তার মায়ের দুটি কিডনিই না জানিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। পরে পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তের পর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ওই নারীর দুটি কিডনি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০
এজেডএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।