ঢাকা: মার্কিন লবিস্ট ফার্মের কাছে পাঠানো একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়া মীর কাসেম আলীর ২৫ মিলিয়ন ডলার দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) কমিশনের সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মীর কাসেম আলী যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার পাচার করেছেন বলে অভিযোগ ছিল৷ এ অভিযোগের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান করে৷ এ অর্থ যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রভাবিত করতে ব্যবহার করা হয়েছে৷ বর্তমানে এ অনুসন্ধান বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে রয়েছে৷
অভিযোগ রয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে মীর কাসেম আলী ওয়াশিংটনের ‘ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ নামে একটি ‘ল’ ফার্ম’কে ২৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় পৌনে তিনশ’ কোটি টাকা) পাঠিয়েছিলেন। লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই চুক্তির কপি এবং টাকা দেওয়ার রসিদ দুদকের অনুসন্ধান টেবিলেও রয়েছে।
২০১২ সালের আগস্টের মাঝামাঝি আইন মন্ত্রণালয় থেকে লিখিতভাবে দুদকে এ বিষয়টি জানিয়ে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে বলা হয়। অভিযোগটি আমলে নিয়ে ওই বছরের আগস্টেই দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
দুদকে পাঠানো আইন মন্ত্রণালয়ের অভিযোগে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নস্যাৎ করতে ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনের ‘ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’র সঙ্গে মীর কাসেম আলী চুক্তি করেন। ওই চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মীর কাসেম আলী আর ক্যাসিডি’র পক্ষে স্বাক্ষর করেন এ্যান্ড্রিও জে ক্যামিরস।
চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে, ক্যাসিডিকে অগ্রিম ২৫ মিলিয়ন ডলার দিলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ শুরু করবেন। এ ছাড়া ক্যাসিডি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ কাজে ভ্রমণের জন্য আরো দেড় লাখ ডলার অতিরিক্ত দিতে হবে। এ ছাড়া ভ্রমণের সব ধরনের পকেটমানি মীর কাসেম আলীকে বহন করতে হবে।
চুক্তির পর মীর কাসেম আলীকে ক্যাসিডি একটি চিঠি লেখে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে তারা বাংলাদেশে আসা শুরু করবেন। একই সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সিনেটর, কংগ্রেসম্যান, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রশাসকদেরও প্রভাবিত করা হবে।
এরপরই মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে ব্রিটিশ আইনজীবী টমি ক্যাডম্যান বাংলাদেশে আসেন। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মাত্র ৬ মাস কাজ করার কথা মার্কিন এই ‘ল’ ফার্মটির। পরে কাজ করাতে হলে তাদের আরো মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধান করে মীর কাসেম আলীকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। জিজ্ঞাসাবাদে মীর কাসেম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মীর কাসেম জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম মজলিসে শূরার সদস্য। দলটির বড় অর্থ জোগানদাতা হিসেবেও তার পরিচিতি। দেশের ধণাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২০
ডিএন/ওএইচ/