ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ছোট এক জেলা শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া। প্রায় ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরটিতে রয়েছে অনেক বহুতল ভবন।
যারা ছাদ বাগান করে ইতোমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তাদেরই একজন শহরের কালাইশ্রী পাড়ার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন রুমি। পেশায় একজন সংবাদকর্মী। তিনি তার এই ব্যস্ততম কর্মজীবন থেকে সময় বের করে নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান। নির্মিত ভবনের পুরো ছাদ জুড়ে আবাদ করেছেন শতাধিক প্রকারের ফলজ ও বনজি বৃক্ষের বাগান। বাদ যায়নি ঘরের বারান্দাও। সেখানে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে যাচ্ছে ক্যাকটাস, রঙ্গণ, পাতাবাহার, গোলাপসহ বিভিন্ন জাতের ফুল। তার এই বৃক্ষরাজির সমারোহের কারণে তিনি সেরা ছাদ বাগানি হিসেবে সম্মাননাও পেয়েছেন।
তার ভবনের ছাদে গিয়ে দেখা মিলে, পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদে বাগানের পুরো নির্যাস গুলিয়ে যায় পুরো শরীর জুড়ে। গৌধূলির মহোতা আর বাগানের সৌন্দর্য মিলে যেন একাকার।
বাগানটি ঘুরে দেখা যায়, দেশি, চায়না দার্জিলিংয়ের কমলা, ট্যাংক, মাল্টা, বিভিন্ন রকমের পেয়ারা, জামরুল। বিভিন্ন জাতের আম, মিষ্টি জলপাই, ডালিম, আনার, সবেদা, দারুচিনি, তেজপাতা, কামরাঙ্গা, বাউকুল, আপেল কুল। বিভিন্ন রকমের লেবু, আমড়া। এছাড়া বিভিন্ন রকমের সবজির মধ্যে রয়েছে যেমন পুঁই শাক, লাউ, ঢেরস, টমেটো, সাজনা। ফুলের মধ্যে রয়েছে বাগান বিলাস, রঙ্গন, গেন্দা, ক্যাকটাস, গোলাপ, বিভিন্ন রকমের পাতাবাহারসহ শতাধিক বৃক্ষ।
কথা হয় এই ছাদ বাগানের কারিগর সংবাদকর্মী জালাল উদ্দিন রুমির সাথে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে স্বস্তি পেতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতে ছাদের উপর বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে পুরো ছাদ জুড়ে বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ করি। শখের কারণে এটি করলেও এতে আমার পরিবারের কিছুটা চাহিদাও মিটছে।
তিনি আরও বলেন, আমার পুরো বাগানের গাছগুলো বারোমাসি ফল ধরে। বছরের পুরো সময় জুড়ে বাগান থেকে কোন না ফল পাই। যা সচরাচর বাজারেও পাওয়া যায় না।
বাগানগুলো পরিচর্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে বাগান পরিচর্যার ফলে আমার পরিবারের সদস্যদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশ সাধিত হয়।
এ দিকে জালাল উদ্দির রুমির মত আরও অনেকেই ছাদ বাগান করতে উৎসাহী হয়ে ওঠছে। শহরের বিভিন্ন বহুতল ভবনের দিকে তাকালে দেখা মেলে ছোটখাটো বাগানের।
কথা হয় শহরের দক্ষিণ মোড়াইল এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক চায়না চৌধুরী সায়মার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শখের বসে গত চার বছরে তিলে তিলে বাগানটি গড়ে তুলেছি। আমার বাগানে গোলাপ, হাসনাহেনা, বেলী, জবা, চন্দ্রমলিকা, দোপাটি, শিউলীসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির ফুল রয়েছে। সারাদিন কর্মব্যস্তার শেষে যখন ফুলের বাগানটি দেখি তখন মন জুড়িয়ে যায়। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আশপাশের লোকজনও দেখতে আসে।
অপর এক বাগান প্রেমিক মেড্ডা এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল আদন অর্চি বাংলানিউজকে বলেন, ছোট বেলা থেকে ফুল ও ফল গাছের প্রতি আমার আর্কষণ আছে। সব সময় ভাবতাম একটি বাগান গড়ে তোলার। কিন্তু বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তা করা যাচ্ছিল না। হঠাৎ একদিন ভাবলাম ছাদেই গড়ে তুলব স্বপ্নের বাগান। যে ভাবনা সেই কাজ। তারপর ড্রাম ও টবের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রায় ৩০ প্রজাতির বিভিন্ন গাছ রোপণ করেছি। এর মধ্য নয়নতারা, গোলাপ, কাটামুকুট, কসমচ, জিনিয়া, সন্ধ্যামালতী, ক্যালামচু, পাথরকুচি, এ্যালভেরা, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, তুলসীসহ আরও অনেক গাছ রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিউল হক মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, যাদের ছাদ বাগান রয়েছে বা আগ্রহী তারা কৃষি বিভাগ থেকে যে কোন ধরনের পরামর্শ বা সহায়তা নিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
কেএআর