ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৪ বছর পরও সংযোগ সড়কের অপেক্ষা ঘুচছে না ৬৬ লাখ টাকার ২ সেতুর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২১
৪ বছর পরও সংযোগ সড়কের অপেক্ষা ঘুচছে না ৬৬ লাখ টাকার ২ সেতুর

রাজশাহী: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নে রয়েছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। এখানকার অধিবাসীদের চলাচলের দুর্ভোগ ঘুচাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর পদ্মার এই দুর্গম চরাঞ্চলে আলাদা দুটি নালায় দুটি সেতু নির্মাণ করে দেয়।

২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এই কাজটি শেষ করা হয়। এর পর চারটি বছর চলে গেছে। কিন্তু সড়কের অভাবে আজও অলস পড়ে আছে নির্মিত এই সেতু দুটি!

বাঘার গড়গড়ি ইউনিয়নে পদ্মার তীর ঘেঁষে নির্মিত এই সেতু দুটি এখনো তাই চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারেনি। উপজেলার বাঘা-লালপুর সড়কের দক্ষিণে সুলতানপুর ও কড়ালি গ্রামে ৪০ ফুট দৈর্ঘ এবং ১২ ফুট প্রস্থের সেতু দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৬ লাখ টাকা। সড়কসহ সেতু দুটি করে দেওয়ার কথা ছিল ঠিকাদারের। কিন্তু সেতু হলেও সড়ক হয়নি। এরই মধ্যে কেটে গেছে চার বছর।

সেতু দুটি কি তাহলে এভাবেই অলস পড়ে থাকবে? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় অধিবাসীদের মনে। দুর্ভোগই যদি নিয়তি হয় তাহলে সরকারি অর্থের অপচয় কেন? এমন প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর খুঁজছেন তারা।

শুধুমাত্র সংযোগ সড়কের অভাবে এই সেতু দুটির ওপর দিয়ে মানুষ কিংবা যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। সড়ক বিচ্ছিন্ন সেতু দুটির একটি হচ্ছে- সুলতানপুর সাধু মিয়ার মোড় সংলগ্ন গ্রামের দক্ষিণের পদ্মার খালের ওপর। আরেকটি এর ৫০০ গজ পূর্বে কড়ালি গ্রামের খাদেম ও জালেকের বাড়ির দক্ষিণের পদ্মার খালের ওপর। সেতু সংলগ্ন উত্তরে প্রাথমিক বিদ্যালয়। দক্ষিণে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল।

চারদিকেই ফসলি জমি। এই চরাঞ্চলে ৩৫টিরও বেশি পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করার জন্য সেতু এলাকা পার হয়ে এপারে আসতে হয়। কারণ সেতুর উত্তর পাশেই রয়েছে সুলতানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

তাই সেতুর দক্ষিণ ও উত্তরপারের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই এপার-ওপার যাতায়াত করতে হয়। স্কুলগামী শিক্ষার্থী ছাড়াও জীবন-জীবিকার তাগিদে চরাঞ্চলের মানুষগুলোকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতু দুটি রক্ষণাবেক্ষণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে বছরের পর বছর অলস হয়ে পড়ে থাকা সেতুর চারিদিকের মাটি ধসে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমাতে সেতু দুটি নির্মাণ করা হলেও এখন তা মানুষের কোনো কাজেই আসছে না। তারা এখন সেতুর পাশ দিয়েই চলাচল করেন। শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে আর বর্ষায় নৌকায় পার হতে হয় সেতু এলাকা। দুই পাশের মাঠের ফসল ঘরে তুলতেও কষ্ট হয় কৃষকদের। বিশেষ করে বর্ষায় বেশি বেকায়দায় পড়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা।

সুলতানপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক সোলাইমান হোসেন ও কড়ালি গ্রামের মুনসুর আলী মণ্ডল বলেন, জনস্বার্থে সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল চার বছর আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চলাচলের জন্য মাটিও ফেলা হয়নি। আর পাকা সড়ক তো অনেক দূরের কথা। নির্মাণের পর থেকেই সেতু দুটির এই বেহাল দশা।

প্রতিবছর বন্যায় সেতুর পাশের মাটি ধসে অনেক নিচু হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ঠিকও করা হয়নি। যার কারণেই চরাঞ্চলের মানুষদের সেতুর পাশ দিয়েই চলাচল করতে হয়।
দাদপুর গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী শফিকুল জানান, সেতুর উত্তরে সুলতানপুর, খানপুর বাজারে যেতে হলে অনেক দূর ঘুরে যেতে হয়। এতে সময়ও বেশি লাগে। কিন্তু উপায় না থাকায় তার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঘুরে ঘুরেই যাতায়াত করতে হয়। স্থানীয় কৃষকদের দুর্ভোগ আরও বেশি। বিভিন্ন ফসল তোলার পর মাঠ থেকে বাড়ি বা স্থানীয় বাজারে পাঠাতে বেগ পেতে হয়।

গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগেই এই সেতু দুটি সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। যে দুইজন ঠিকাদার ওই সেতুর কাজ করেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা শিগগিরই সেতুর পাশে মাটি ফেলে সংস্কার করে সড়ক করে দিতে চেয়েছে। তারা অপেক্ষায় আছেন। এখন দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।

একই কথা জানান- রাজশাহীর বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু। তিনি বলেন, সেতু দুটি তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগের। সংযোগ সড়ক না হলে সেতু দুটি সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২১
এসএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।