ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাবাড় হচ্ছে জমির ওপরের মাটি, ফলন কমার শঙ্কা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২১
সাবাড় হচ্ছে জমির ওপরের মাটি, ফলন কমার শঙ্কা

ফেনী: ফেনীতে আশঙ্কাজনক হারে কেটে নেওয়া হচ্ছে জমির টপ সয়েল (জমির উপরিভাগের মাটি)। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার প্রবণতা ভয়ঙ্কর।

তা হতে পারে এ অঞ্চলের জন্য বড় ধরনের হুমকির কারণ। ফসলের উৎপাদনে আসতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। ক্রমাগত কমতে থাকবে উৎপাদন। যার ফলে অধিক চাষাবাদেও ফলন হবে কম। দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি।  

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক আগ থেকেই ফেনীতে চলে আসছে এ প্রবণতা। গেল বছর এটি প্রকট আকার ধারণ করেছিল। শীত মৌসুমে ফসলের মাঠ শুকনো থাকায় এ সময়টাই বেঁচে নেয় মাটি খেকোরা।  

ইটভাটা মালিকদের প্রলোভনে পড়ে কিছু জমির মালিক না বুঝে অল্প টাকার লোভে নিজেদের জমির মাটি বিক্রি করে দেয়। অভিযোগ আছে, জমির মালিককে না জানিয়ে রাতের আঁধারেই কেটে নেওয়া হয় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি। চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহসও পায় না জমির মালিকরা।  

গেল বছর প্রশাসনের জোরালো ভূমিকার কারণে এ প্রবণতা কিছুটা কমলেও চলতি মৌসুমে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মাটি খেকো চক্রটি।  

স্থানীয়রা জানিয়েছে, ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর, কাজিরবাগ, ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বৈরাগপুর, ঘনিয়ামোড়া, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের তারালিয়া, নোয়াপুর, বদরপুর, কুতুবপুর, জিএমহাট ইউনিয়নের নুরপুর, শরীফপুর, আমজাদহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে সাবাড় হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমির উপরিভাগ।  

মাটি খেকোদের দৌরাত্ম এতটাই বেড়েছে যে, ফেনী সদর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী ধর্মপুর এলাকা থেকে কেটে নিয়ে যাচ্ছে টিলার মাটিও। এলাকাবসী দেখলেও বলার সাহস পাচ্ছে না।  

আবাদি জমির উপরিভাগ কেটে ফেলার ক্ষতি প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফেনীর উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে মাটি সবচেয়ে মূল্যবান। জমির উপরিভাগের ছয় থেকে সাত ইঞ্চির মধ্যেই থাকে সব ধরনের জৈব গুণাগুণ। অথচ এটাই কেটে নেওয়া হচ্ছে। ফলে এসব জমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে।  

ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ফেনীতে শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। মূলত এসব ইটভাটার জন্য প্রয়োজন হয় মাটির। পুকুর ও অনাবাদি জমির মাটি কাটার অনুমতি রয়েছে।  

তিনি বলেন, কোনো ফসলি জমির টপ সয়েল কাটার অনুমতি কারোর নেই। এরইমধ্যেই এ কাজ করার দায়ে অনেককে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে। গেল বছর এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ২০টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। চলতি বছরও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  

পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক মো. সাইদুর রহমান বলেন, জমির উপরিভাগ কাটা পরিবেশের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি এ বিষয়ে অভিযোগ করে তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।

পরিবেশ সচেতনরা বলছেন, মাটির টপ সয়েল বিক্রি করতে জমি মালিকদের নানাভাবে প্ররোচিত করছে ইটভাটা মালিক ও ব্যবসায়ীরা।  

জেলার ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের কবির আহম্মদ নামে এক জমি মালিক বলেন, ইঠভাটা মালিকরা আমাদের বলেছেন, জমির উপরিভাগ কাটলে কোনো ধরনের ক্ষতি হয় না। শীত মৌসুমে মাটি কাটলে বর্ষা মৌসুমে সে মাটি ভরাট হয়ে যাবে। জমির জৈব গুণাগুণেরও কোনো ক্ষতি নেই।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় ফেনী সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক আহমদ আলী বিভোরের সঙ্গে। তিনি বলেন, জমির টপ সয়েলে সবচেয়ে ঘনত্বের জৈবিক বস্তু থাকে বলে উদ্ভিদ পৃথিবীর প্রায় ৯৫ শতাংশ খাদ্য উৎপাদনে একে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে।  

এদিকে ইটভাটা মালিকরা বলছেন, তারা পুকুর ও অনাবাদি জমি থেকেই মাটি আনছেন। ফসলি জমি থেকে মাটি তারা কাটছেন না।  

এলাকার পরিবেশ সচেতন সাধারণ মানুষ বলছেন, এ চক্রের সঙ্গে অনেক প্রভাশালীরা জড়িত। তাদের ছত্রছায়ায় এটি চলে আসছে। যার কারণে মুখ খোলার সাহস পায় না অনেকে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২১
এসএইচডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।