ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রেলপথে আর সময় বৃদ্ধি নয়, ঠিকাদারকে শাস্তির সুপারিশ

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
রেলপথে আর সময় বৃদ্ধি নয়, ঠিকাদারকে শাস্তির সুপারিশ

ঢাকা: একে একে চারটি বছর পেরিয়ে গেছে। তবুও সমাপ্ত হয়নি ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্প’ এর কাজ।

 

অথচ ২০১৬ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা ছিল। এই মেয়াদে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়নি। এর পরে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এই মেয়াদেও প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে দ্বিতীয়বার ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর সময় বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখের মধ্যে প্যাকেজের কাজ গুণগত মান বজায় রেখে শেষ করার জন্য সময়াবদ্ধ বাস্তবভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারণ করা দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যথাযথভাবে কাজ সমাপ্ত করতে না পারলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।  

আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, 'এর আগে প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্যয় ব্যতিরেকে বার বার সময় বৃদ্ধি করা যাবে না। প্রকল্পটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। জুন ২০২১ সালের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে হবে অন্যথায় শাস্তি দেয়ার বিষয়ে মত দেয়া হয়েছে। ’

সূত্র জানায়, প্রকল্পের বিষয়ে আরো কিছু সুপারিশ করেছে আইএমইডি। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিতে আর্থিক অগ্রগতি ১০২ কোটি ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার বা ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ। ফলে দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্পটি সমাপ্তির জন্য পূর্ত কাজের বাস্তবায়ন অগ্রগতি আরো জোরদার করতে হবে। অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রকল্পের পূর্ত কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ গুণগতমান বজায় রেখে সমাপ্ত করার জন্য নিবিড় মনিটরিং ও তদারকির কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে আইএমইডি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের অন্যতম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২৪০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগে বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে কি-না সেটি নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

ভূমি অধিগ্রহণসহ সকল জটিলতা কাটিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ১৮ মাস মেয়াদী এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মোট সাড়ে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের সাড়ে ছয় কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ অংশে। আর বাকি চার কিলোমিটার রেলপথ ভারতের অংশে। আখাউড়া-আগরতলা  ডুয়েলগেজ রেলওয়ে লিংক (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্প কাজের জন্য ২০১৮ সালের ২১ মে মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ২৪০ কোটি ৯০ লাখ ৬৩ হাজার ৫০১ টাকা।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত মার্চ মাসের শেষভাগ থেকে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধের পর গত ১ জুন থেকে পুনরায় কাজ শুরু হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসে কারণে এখনও সব শ্রমিকরা নিয়মিত কাজে আসছেন না। এর ফলে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। লকডাউনের কারণে প্রকল্প কাজের অনেক স্টাফ ভারতে চলে যান। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কনসালটেন্টসহ বেশ কয়েকজন স্টাফ বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। এতে করে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আখাউড়া-আরগতলা ডুয়েলগেজ রেলওয়ে লিংক (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্প কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক।

প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন বাংলানিউজকে বলেন, আশা করছি ২০২১ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে। ’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইএমইডি’র এমন নির্দেশনা আমরা এখনো হাতে পাইনি। ’

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, ভারত সরকারের অনুদানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে নতুন এ রেলরুট। এরপর বিদ্যমান আগরতলা-কলকাতা রেলপথ ব্যবহার করেই বাংলাদেশ থেকে কলকাতা পর্যন্ত যাওয়া যাবে। প্রকল্পের আওতায় তিনটি মেজর এবং ২০টি মাইনর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ৫৬ দশমিক ৬১ একর ভূমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি তিনটি স্টেশনে কম্পিউটারাইজড ইলেকট্রনিক সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনেরও ব্যবস্থা থাকছে। প্রকল্পের আওতায় একটি চার চাকার ডাবল কেবিন পিক-আপ সংগ্রহের পাশাপাশি পুনর্বাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এনজিওকে নিয়োগ দেওয়া হবে।  

২০১০ সালে ভারত সরকারের অনুদানে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। স্মারক অনুযায়ী ভারত সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কন্সট্রাকশন (ইপিসি) ভিত্তিতে এ রেল সংযোগ নির্মাণ করা হচ্ছে।

নতুন রেলরুটটি ভারতের আগরতলা স্টেশন থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে ৫ দশমিক ০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। বাংলাদেশ অংশে এটি আখাউড়া-চট্টগ্রাম রেলপথের গঙ্গাসাগর স্টেশনে এসে মিলিত হবে। তারপর বিদ্যমান  রেললাইনের পূর্বপাশ দিয়ে সমান্তরালভাবে আখাউড়া জংশন স্টেশনে গিয়ে মিলিত হবে।

আখাউড়া-আগরতলা রেললিংকটির মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন পথ উন্মোচিত হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং উপ-আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে একটি নতুন করিডোর স্থাপিত হচ্ছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
এমআইএস/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।