ঢাকা: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) অধিকাংশ সাংবাদিক শিবির! জামায়াতের ছাত্রসংগঠনের এসব সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তেও জড়িত। দলের মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধান কাজ এবং একইসঙ্গে প্রগতিধারার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতেও এরা তৎপর।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাবির অধিকাংশ সাংবাদিকের শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। ক্যম্পাসে শিবির অধ্যুষিত হল থেকে এ সংক্রান্ত দলিলপত্রও উদ্ধার করেছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
গত ১১ জানুয়ারি ছাত্রলীগ-শিবেরের সংঘর্ষের পর হল ও ক্যাম্পাস ছাড়া হয় শিবির। শাবির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ ধরনের ঘটন ঘটে। পালিয়ে যাওয়ার সময় শিবির নেতা-কর্মীরা শাহপরান ও বঙ্গবন্ধু হলের দু’টি রুমে আগুন ধরিয়ে দলিলপত্র নষ্ট করলেও তাদের অন্যান্য রুমের আলমারীতে থাকা দলিলপত্র থেকে যায় অক্ষত। সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিবিরের হলের আলমারি ভেঙে উদ্ধার করে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। যা প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় শাবি’তে শিবিরকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি তাদের রাজনীতির সাথে কারা কারা জড়িত সে বিষয়টির প্রমাণপত্র আসে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে। জামায়াত-শিবিরের ওইসব গোপন দলিলপত্রে পাওয়া যায়, শিবিরের সাথী হিসেবে কাজ করা ১৬ সাংবাদিকের তথ্য। জানা যায়, অধিকাংশের নাম। এরা হচ্ছে- মুহাম্মদ আতাউর রহমান সোহেল ওরফে সোহেল রহমান, নাঈমুল করীম নাঈম ওরফে নাঈম করীম, মামুন আবদুল্লাহ, তাহজীব হাসান, মোজাহিদুল ইসলাম টিটু, গাজী সাদেক, মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, শামসুল ইসলাম, শাহ জহুরুল হোসাইন রাসেল। উল্লেখিতদের কয়েকজন ঢাকায় এসে শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় মিডিয়াগুলোর মূল অফিসেও কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
তবে, অভিযুক্তরা শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করে বলেছেন, তাদের বিতর্কিত করতেই এমনটি করেছে শিবির।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও কৃষি কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দখলদারি কায়েম করার ছকে শাবি’র মিডিয়া কর্মীদের মাঝে আধিপত্য গড়ে তোলে শিবির। অভিযোগ আছে, সুস্থ ধারার কেউ সাংবাদিকতার সাথে জড়িত হতে এলে তাদের বিরুদ্ধে নানা প্রপাগান্ডা চালায় প্রগতিশীল দাবিদার শাবির এসব শিবির কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সাংবাদিক হাসান সোহেল বলেন, ‘তাদের কথামত না চলার কারণে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির সাথে আমি জড়িত বলে সংঘবদ্ধভাবে আমার বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালায় চক্রটি। যে কারণে আমাকে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। বিষয়টি উন্মোচিত হওয়ায় ভালো লাগছে। ’
শাবির আরেক সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাকে ব্যবহার করতে না পেরে এবং তাদের পক্ষের লোক নই বুঝতে পেরে নাজেহাল করতে উঠে পড়ে লাগে তথাকথিত এইসব সাংবাদিক। তাদের হুমকি-ধমকির কারণে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিনপাত করতে হয়েছে আমাকে। ’
এ প্রসঙ্গে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হিসেবে পরিচিত পত্র-পত্রিকায় মৌলবাদীদের অনুপ্রবেশের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে প্রথম সারির কয়েকটি দৈনিকের সম্পাদককে অবগত করেছিলাম। মনে হয়, সে সময় তারা বিষয়টিকে সেভাবে আমলে নেননি। ’
ভিসি আরও বলেন, ‘শাবির ঘটনা প্রমাণ করে মৌলবাদীরা সুকৌশলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের পত্র-পত্রিকায় ঢুকে পড়ছে। যা খুবই দুঃখজনক। এখনও যদি এ ব্যাপারে সচেতন না হওয়া যায় তাহলে ভবিষ্যতে চরম মূল্য দিতে হবে। ’
ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিধারার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতেও তারা ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রলীগের মধ্যে বিভক্তি, শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ, গ্রুপিং সৃষ্টি করে তারা ফায়দা লুটছে। ’
ভিসি জানান, এসব সাংবাদিকরা সাংবাদিকতার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে মাঠ পর্যায়ে শিবিরের অনুসন্ধান পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে তারা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের মূল অফিসেও ঢুকে পড়ছে। এতে করে, পত্রিকার পলিসিকে বাধাগ্রস্থ করার শংকা রয়েছে। সে কারণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কাউকে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত করা সমীচিন হবেনা। ফিল্টারিং করে নিয়োগদান করাই হবে যুক্তিযুক্ত। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ৩০ জানুয়ারি, ২০১২