ঢাকা: ‘১১ বছরের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে রুনা আক্তার ও আবুল কালাম মিয়া দম্পতির। তিন বছর আগে গ্রামের বিভিন্ন এনজিও থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরব যায় আবুল কালাম মিয়া।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আবুল কালাম সম্প্রতি তালাক নামা পাঠায় রুনাকে। এতে রুনা তার তিন সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে পড়েন। বাধ্য হয়ে কাজ শুরু করেন গ্রামের সবজিক্ষেতে। গত ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরার চর মরজালের একটি ধানক্ষেত থেকে রুনা আক্তারের (২৮) চোখ উপড়ানো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কে বা কারা এবং কি কারণে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তা নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গত ১৭ ডিসেম্বর রুনার বাবা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা (নং-১২) দায়ের করেন।
ঘটনাক্রমে শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর সন্দেহ হলেও গুরুত্বের সঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। এতে পাওয়া যায় হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য। রুনার দূর-সম্পর্কে এক মামা আব্দুর রাজ্জাক তাকে নতুন করে বিয়ের প্রলোভন দেখায় খোরশেদ মিয়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। এজন্য খোরশেদের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা নিয়েছিল মামা রাজ্জাক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিয়েতে রাজি না হওয়ায় রুনাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেন আব্দুর রাজ্জাক ও খোরশেদ মিয়া’।
রোববার (২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।
মুক্তা ধর বলেন, এ হত্যার ঘটনাটি কেন এবং কিভাবে সংগঠিত হয়েছে, কারা জড়িত, কারো সঙ্গে পূর্ব কোন বিরোধ ছিল কিনা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ভিকটিমের পরিবার, ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে এলআইসির একাধিক চৌকস টিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সন্দিগ্ধ আসামি খোরশেদ মিয়াকে নেত্রকোনার কলমাকান্দা এবং আব্দুর রাজ্জাক খানকে নরসিংদীর রায়পুরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রুনা বাবার বাড়ি থেকে মামার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বের হয়। এরপর থেকে আর তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত ৮টার দিকে পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার নাম্বার বন্ধ পায়। ১৩ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় লোকজন গ্রামের ধানক্ষেতে রুনার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলেন, যখন শ্বশুরবাড়ি থেকে রুনা সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে যায়। এতে সবাই জেনে যায় রুনাকে তার স্বামী তালাক দিয়েছে। রুনা জীবিকার জন্য সবজিক্ষেতে কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে নতুন করে বিয়ের জন্য প্ররোচনা দিতে থাকেন দূর-সম্পর্কের মামা পোল্ট্রি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর চার সন্তানের জনক বৃদ্ধ খোরশেদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেন। এজন্য ৯০ হাজার টাকা খরচাও আদায় করেন আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিয়ের জন্য অমত জানান রুনা। এ নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক ও খোরশেদ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধানক্ষেতে গিয়ে হাত-পা বেঁধে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ও চোখ উপড়ে ফেলে।
মুক্তা ধর বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় আরও দুইজন জড়িত। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার দুইজনকে আজই নরসিংদী আদালতে সোপর্দ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২২
এসজেএ/এএটি