রংপুর: রংপুরে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব-১৩ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদ বশির আহমেদ।
গ্রেফতাররা হলেন- রংপুর নগরীর গ্রান্ডহোটেল মোড় এলাকার বুলু প্রধানের ছেলে শাহারুখ করিম অনিক (৩৪) ও তার স্ত্রী আসমানী আক্তার (২৪)।
র্যাব জানায়, প্রথমে চক্রের নারী সদস্য টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হন। তারপর যোগাযোগ থেকে প্রেম বা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর বাসায় নিমন্ত্রণ জানান। বন্ধুত্ব বা প্রেম ভেবে যারাই নিমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাসায় গিয়েছেন, তারাই হয়েছেন প্রতারণার শিকার। প্রেমপ্রতারণার এমন ফাঁদে পড়ে খুইয়েছেন লাখ লাখ টাকা। আবার কাউকে টর্চার সেলেও ভুগতে হয়েছে নিষ্ঠুর নির্যাতন। ভদ্রতার লেবাস ধরে এসব করতেন ওই যুবদম্পতি।
গ্রেফতার শাহরুখ করিম অনিক ২০১৬ সালে গঠিত রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে কেন্দ্র থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালী থানার একটি মামলার এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামি গ্রেফতারের অধিযাচনপত্রের ভিত্তিতে র্যাব-১৩ জানতে পারে ওই দম্পতিসহ একটি চক্র নগরের বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে তাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে কৌশলে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যেত। এরপর সেখানে অশ্লীল ছবি তুলে জিম্মি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করত। এছাড়া জিম্মি করে অর্থ আদায়, হত্যার ভয় দেখিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, অধিযাচনপত্রটি আমলে নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে জিম্মিকারী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় তারা। প্রাথমিকভাবে প্রতারণার বিসয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রোবববার (২জানুয়ারি) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড় এলাকায় অনিকের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব-১৩। এসময় নিজ বাসা থেকে শাহারুখ করিম অনিক ও তার স্ত্রী আসমানী আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।
মাহমুদ বশির আরও জানান, অভিযানের সময়ে ওই বাসার ৬ষ্ঠ তলায় একটি টর্চার সেলের সন্ধান মিলেছে। সেখানে প্রতারণার ফাঁদে পড়া ব্যক্তিদের জিম্মি করে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করত ওই দম্পতি। টর্চার সেল থেকে দুটি চাপাতি, শর্কের ইলেকট্রিক তার, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদি, হাতুড়ি, ছুরি, স্ট্যাম্প, ভিডিও ধারনের দুটি মোবাইল ফোন এবং একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ওই দম্পতি বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিম্মি করে টাকা আদায় এবং নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। তাদের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সহযোগিদের আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাবের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, ৩ জানুয়ারি, ২০২১
এমএমজেড