ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, ধরা পড়ল ২০ বছর পর!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২২
পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, ধরা পড়ল ২০ বছর পর!

মেহেরপুর: ২০০২ সালের ২৫ মার্চ গাংনীর রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ায় ভর্তি হয়েছিলেন হতদরিদ্র বাচেনা খাতুন নামে এক নারী। ওইদিনই অপারেশন করেন রাজা ক্যলিনিকের স্বত্বাধিকারী পারভিয়াস হোসেন রাজা।

অপারেশন শেষে পেটের মধ্যে একটি কাঁচি রেখেই সেলাই করে দেন চিকিৎসক।

ভুক্তভোগী বাচেনা খাতুন (৫০) চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ঢিৎলা ইউনিয়নের নওদাহাপানিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী।

তারপর পার হয়ে গছে ২০টি বছর। ভুক্তভোগী ওই নারী ২০ বছরই শরীরে নানা ধরনের রোগ বালাই নিয়ে বিভিন্ন সময় ডাক্তার, কবিরাজসহ নানা ধরনের চিকিৎসকের কাছে ধর্না দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সুস্থ হতে পারেননি কখনো। ধীরে ধীরে যাচ্ছিলেন মৃত্যুর দিকে। এসময় চিকিৎসা চালাতে গিয়ে স্থাবর-অস্থাবর সহায় সম্পত্তি সব ঘুচিয়ে অভাব অনটনের সঙ্গে দিনাতিপাত করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাচেনা খাতুনকে তার স্বামী রাজশাহীর একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। ওই ক্লিনিকে বাচেনা খাতুনকে বারবার চেকআপ করার পর তার পেটের মধ্যে একটি ৯ ইঞ্চি কাঁচি ধরা পড়ে। এরপর তাকে আবারও দ্রুত অপারেশন করে কাঁচি বের করার পরামর্শ দেওয়া হয়।  

অসুস্থ বাচেনা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, অপারেশনের পাঁচ থেকে ছয় মাস পর পেটে ব্যথা শুরু হলে তিনি রাজা ক্লিনিকে যান। ডাঃ পারভিয়াস হোসেন রাজা তাকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু কোনো পরিবর্তন না দেখে বাচেনা খাতুন কখনো চুয়াডাঙ্গা, কখনো আলমডাঙ্গা কখনো গ্রাম্য ডাক্তার এমনকি যখন যে যা বলেছে সেখানেই ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন একটু ভালো থাকার আশায়।  

কয়েকদিন আগে পেটে অসহনীয় ব্যথা শুরু হলে রোববার (০২ জনুয়ারী) রাজশাহীর দি ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। তারা জানান,  পেটের মধ্যে একটি কাঁচি রয়েছে। পরে চিকিৎসক রোগীর পোশাক পরিবর্তনসহ একাধিকবার এক্সরে করে পেটের মধ্যে কাঁচি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সেই সঙ্গে তাকে দ্রুত পুনরায় অপারেশন করে কাঁচি বের করার পরামর্শ দেন।

বাচেনার স্বামী আব্দুল হামিদ জানান, তার শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি, দুইটা গরু বিক্রি এবং তার বলতে যা ছিল সবটুকুই বিলিয়ে দিয়েছে স্ত্রীর চিকিৎসার পিছনে। বর্তমানে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার পর্যন্ত জোটে না। তিনি কিভাবে পুনরায় অপারেশন করাবেন।

রাজা ক্লিনিকের মালিক চিকিৎসক পারভিয়াস হোসেন রাজা জানান, মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। এই অপারেশন করেন ডা. মিজানুর রহমান নামে এক চিকিৎসক। তিনি ভুক্তভোগী বাচেনা খাতুন ও তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টির সুরাহা করবেন বলেও জানান।

মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী জানান, এটা ঘটে থাকলে খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভুক্তভোগী পরিবার আইনের আশ্রয় নিলে বিষয়টি আইনগতভাবে সুরাহা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।