ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

টিস্যু পেপারে তৈরি জাল টাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২২
টিস্যু পেপারে তৈরি জাল টাকা

ঢাকা: এ-৪ সাইজের দু’টি টিস্যু পেপার একসঙ্গে আঠা দিয়ে লাগিয়ে বিশেষ কায়দায় রঙ্গিন প্রিন্টারে বানানো হতো জাল টাকা। প্রতি ১ লাখ জাল নোট বিক্রি হয় ১০-১৫ হাজার টাকায়।

জাল টাকা তৈরির এই চক্রটি সাধারণত কোনো মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠানে কৌশলে ছড়িয়ে দিত। বর্তমানে বাণিজ্যমেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তৈরির পরিকল্পনা করেন তারা।

সোমবার (০৩ জানুয়ারি) রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার জাল নোটসহ চক্রের অন্যতম হোতা ছগির হোসেন ও তার দুই সহযোগীকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪)। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- সেলিনা আক্তার পাখি (২০) ও রুহুল আমিন (৩৩)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট, ৫টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর, ৩টি প্রিন্টার, ১টি হ্যান্ড এয়ারড্রয়ারসহ জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (০৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ২৮ নভেম্বর র‌্যাব-৪ মিরপুর মডেল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকার জালনোটসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা পরস্পরের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জাল নোট তৈরি করে বিক্রি করে আসছিলেন। এই চক্রের সঙ্গে ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, মূলহোতা ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেন। পরবর্তীকে ভ্যানে ফেরি করে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি করতেন। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রির সময় ছগিরের সঙ্গে ইদ্রিস নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। ইদ্রিসের মাধ্যমে তার জাল নোট তৈরির হাতেখড়ি হয়।

প্রথমে তিনি জাল নোট বিক্রি ও পরবর্তীতে সে জাল নোট তৈরির বিষয়টি রপ্ত করেন। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। এক বছর জেল খেটে পুনরায় তিনি ২০১৮ সাল থেকে জাল নোট তৈরি শুরু করেন। তৈরিকৃত জাল নোটগুলো তার চক্রে থাকা অন্যান্য সহাযোগী গ্রেফতার রুহুল আমিন, সেলিনাসহ ৭/৮ জনের মাধ্যমে বিক্রি করেন।

ছগির নিজেই স্থানীয় বাজার থেকে জাল নোট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি কিনতেন। তার ভাড়া বাসায় এ-৪ সাইজের দুটি টিস্যু পেপার একসঙ্গে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রঙ্গিন প্রিন্টারে টাকা তৈরি করতেন। তিনি নিজেই প্রিন্টিং ও কাটিং করতেন। এরপর সেসব জাল নোট তৈরির পর অন্যান্য সহযোগীদের মোবাইলে জাল নোট নিয়ে যেতে বলতেন। প্রতি ১ লাখ জাল নোট ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন। টার্গেট বা চাহিদা অনুযায়ী ছগির প্রতিমাসে তার সহযোগীদের বোনাসও দিতেন।

গ্রেফতাররা সাধারণত কোনো মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠানে জাল নোট বিক্রি করতেন। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তারা তৈরির পরিকল্পনা করেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ছগির ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করতেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার সেলিনা আক্তারের স্বামীও জাল নোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং বর্তমানে তিনি গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন। সেলিনা ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীর চরে একটি বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। স্বামীর মাধ্যমে এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তিনি নিজেও এ চক্রে জড়িয়ে পড়েন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২১
পিএম/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।