ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শিমু নিখোঁজের পর স্বামী বলেছিলেন ‘কিছুই জানেন না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২২
শিমু নিখোঁজের পর স্বামী বলেছিলেন ‘কিছুই জানেন না’

ঢাকা: চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। তবে দিনশেষে তার স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানান ‘তিনি কিছুই জানেন না’।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে রাস্তার পাশ থেকে শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিমুর স্বামী নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শিমুর বোন ফাতিমা নিশা বাংলানিউজকে বলেন, ‘রোববার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে ফোনে জানতে পারি আমার বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি তখন তার ফোনে বার বার কল দিই, কিন্তু নম্বর বন্ধ পাচ্ছিলাম। পরে বোনের মেয়েকে ফোন দিই। জানতে চাই, ‘তোমার আম্মু কোথায়?’ সে আমাকে বলে,     মা সকালে একা বের হয়েছে। এখনও বাসায় ফেরেনি। ’

এরপর আমি বোনের স্বামী নোবেল ভাইকে ফোন দিই। তাকে বলি, ‘ভাইয়া, আপা কোথায়? তার ফোন তো বন্ধ পাচ্ছি। সে নাকি সকালে বের হয়েছে আর সারাদিন ধরে তার নম্বর বন্ধ। ’ তখন তিনি আমাকে বলেন, ‘আমি তো বিষয়টি জানি না। এছাড়া সারাদিনে আমি তাকে ফোন দিইনি। তার নম্বর যে বন্ধ সেটাও আমি জানি না। ’’

রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাতে নোবেল রাজধানীর কলাবাগান থানায় স্ত্রীর নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, রোববার সকাল ১০টার দিকে শিমু কাউকে কিছু না জানিয়ে বের হন। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপ্লব হাসান বলেন, ‘অভিনেত্রী শিমু নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্বামী আমাদের থানায় একটি জিডি করেন। গতকাল নিখোঁজের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। যেহেতু মরদেহটি কেরানীগঞ্জে উদ্ধার হয়েছে, সেখানেই পরবর্তী অভিযোগ বা মামলা হবে। তবে এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। ’

শিমুর বোন ফাতিমা নিশা আরও বলেন, ‘গতকাল আমার বোনের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি জানতে পারি। তাকে কেউ হত্যা করে বস্তাবন্দি অবস্থায় ফেলে রেখে যাবে আমরা এটা চিন্তাই করতে পারছি না। আমার একমাত্র বোন সে। ’

শিমুর মৃত্যুর বিষয়ে কোনও সন্দেহ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেভাবে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, এটা তো নিশ্চিত তাকে কেউ হত্যা করেছে। তবে তাকে কি কারণে এভাবে হত্যা করা হয়েছে তা চিন্তা করতে পারছি না। আপা আর নোবেল ভাইয়ের ১৮ বছরের সংসার জীবন। নোবেল ভাই কেন আমার বোনকে হত্যা করবে বুঝতে পারছি না। আমরা শুনেছি জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ তাকে নিয়ে গেছে। ’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমার বোনের মরদেহটি কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে আমরা এখন সেখানে যাচ্ছি। কখন তার মরদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং এ বিষয়ে থানায় মামলার করার প্রস্তুতিও নিয়েছি। ’

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার জানান, চিত্রনায়িকা শিমুর (৩৫) বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে তার স্বামী নোবেল এবং তার বন্ধু ফরহাদকে গ্রেফতার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

কেরানীগঞ্জ থানা সূত্র জানায়, শিমুর স্বামী নোবেল ঘটনার বিষয়ে স্বীকার করেছেন। শিমুকে অন্য কোনও স্থানে হত্যা করে বস্তায় পুরে কেরানীগঞ্জ ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। নোবেলের ব্যবহৃত (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৩৬৭৪) গাড়িটিও জব্দ করা হয়। জব্দ হওয়া গাড়িতে রক্তের ছাপ পাওয়া গেছে। হত্যার পর এই গাড়ি ব্যবহার করেই স্ত্রীর মরদেহ কেরানীগঞ্জে ফেলে আসে তার স্বামী।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২২
পিএম/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।