ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

এসআইর নামে নির্যাতনের অভিযোগ স্ত্রীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২
এসআইর নামে নির্যাতনের অভিযোগ স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ফারজানা বিনতে ফাকের

খুলনা: খুলনা সদর থানার সোবহান মোল্লা নামে এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নামে সীমাহীন নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী। ফারজানা বিনতে ফাকের।

রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা বিনতে ফাকের এই অভিযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ৮ মাসের শিশু ছেলে ইসতাইনও ছিল। সময়।

সোবহান মোল্লা মাগুরা জেলা সদরের ২০নং চন্দনপ্রতাপ গ্রামের আব্দুস সবুর মোল্লার ছেলে। আর ফারজানা নগরীর মজিদ স্মরণী বাইলেন এলাকার মো. ফাকের ইবনে সামাদের মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে ফারজানা অভিযোগ করেন, এসআই সোবহান মোল্লা প্রথম বিয়ে গোপন করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাকে বিয়ে করেন। এরপর পদোন্নতির নামে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দিতে বাধ্য করেন এবং আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক না দেওয়ায় নিয়মিত নির্যাতন করছেন। সোবহান মোল্লা সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত থাকাকালীন এসব অপকর্ম করলেও বারবার ওই থানার ওসি মমতাজুল হক তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। তার অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে মিমাংসার নামে উল্টো ভিকটিমকে আইনের আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত রেখেছেন। এমনকি থানায় মামলা করতে গেলেও না নিয়ে বারবার তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ন্যায় বিচার পেতে বাধ্য হয়ে তিনি স্বামীর নামে  আদালতে দুটি মামলা করেছেন। কিন্তু দুই মামলার আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে রয়েছেন এসআই সোবাহান। উল্টো আসামির বাবাকে (শ্বশুর) দিয়ে ভিকটিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা সাজানো হয়েছে।

ফারজানা বিনতে ফাকের অভিযোগ করেন, এসআই সোবহান মোল্লা সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত থাকাকালীন তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১২ মে তাকে প্রলুব্ধ করে নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের কাজী অফিসে নিয়ে ৩ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করেন। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন সোবহান মোল্লার প্রথম স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে। তখন তিনি এমএম সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় তার প্রতারণার বিষয়টি তিনি ধরতে পারেননি। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে তার ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে এসআই সোবহান মোল্লা তাকে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার প্ররোচনাও দেন। এ কারণে তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে ২০২০ সালের ৩ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এমনকি তাদের বিয়ের প্রমাণ নষ্ট করতে তিনি রেজিস্ট্রার দেখার অজুহাতে ১৮নং ওয়ার্ডের কাজী অফিসে গিয়ে রেজিষ্ট্রারের ৬নং ভলিয়মের ১৪নং পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। প্রতিবাদ করলে নিকাহ রেজিষ্ট্রারকে (কাজী) হত্যার হুমকি দেন। এ বিষয়ে কাজীর সহকারী সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করতে গেলে তা নেওয়া হয়নি। ফলে কাজী খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। যদিও থানার ওসির মধ্যস্থতায় ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর আবারও তাদের বিয়ে রেজিষ্ট্রি করা হয়।

স্ত্রী ফারজানা বিনতে ফাকের আরও অভিযোগ করেন, তার সুখের জন্য পিতা-মাতা ৫ লাখ টাকার মালামাল দেয়। কিন্তু তারপরও এসআই সোবহান পরিদর্শক হিসেবে পেদোন্নতির জন্য ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। মেয়ের সুখের চিন্তা করে তার বাবা দু’ দফায় ১০ লাখ করে তাকে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দিতে বাধ্য হন। এরপরও তার কাছে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে আরও টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন সময় তাকে নির্যাতন করা হয়। এমনকি কোলের শিশু পুত্রের দুধ কিনে দেওয়ার কথা বলে সোনাডাঙ্গা থানায় ডেকে নিয়েও তাকে পিস্তল দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাঁটিয়ে দেওয়া এবং আসামি পেটানোর লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। এতে তার মাথায় ১২টি সেলাই দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন  ফারজানা বিনতে ফাকের।

এসব ঘটনায় তিনি স্বামী এসআই সোবহানের নামে গত ১৫ ডিসেম্বর খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এ খবর জানতে পেরে ওই দিনই সোবাহান পুলিশের পোশাক পরা অবস্থায় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং তার বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। না দিলে সমস্যা হবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনায়ও তিনি ২৭ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর হাকিমের আমলী আদালত, সোনাডাঙ্গায় মামলা করেন। এ অবস্থায় এসআই সোবহান মামলা তদন্তে পুলিশের অবৈধ প্রভাব বিস্তার এবং মা-বাবাসহ ভিকটিমকে হুমকি দিচ্ছেন এবং ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। ফলে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফারজানা স্ত্রী-সন্তানের অধিকার, নিরাপত্তা এবং ন্যায় বিচার দাবি এবং এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মমতাজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, তারা প্রেম করে গোপনে বিয়ে করেছেন। আমি বা আমাদের ঊর্ধ্বতন কাউকে জানায়নি। সোবহানের আগে স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। একাধিক স্ত্রী থাকলে যেমন ঝগড়া হয় তাই হতো। সোবহান বাসায় যেত না বলে ফারজানা অভিযোগ করতো। আমি মামলা নেইনি এটা পুরো মিথ্যা কথা। মামলা নেব না কেন? মামলা দিলে অবশ্যই নিতাম।

অপরদিকে অভিযুক্ত এসআই সোবহান বাংলানিউজকে বলেন, ফারজানা আমার সাবেক স্ত্রী। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে তা সবই মিথ্যা। তাকে ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর তালাক দিয়েছি। দেনমোহর ৩ লাখ, খোরপোষ ১৫ হাজার, বাচ্চার মাসিক ৫ হাজার টাকা দিয়ে তালাক দিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।