ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আর্থিক সহায়তা বাড়লেও আটকে থাকছে ডিসির হাতে 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২২
আর্থিক সহায়তা বাড়লেও আটকে থাকছে ডিসির হাতে 

ঢাকা: দায়িত্বরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা পুলিশ সদস্যদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা ৫ লাখ টাকা থেকে ৮ লাখ টাকায় উন্নিত করেছে সরকার। তবে অর্থের পরিমাণ বাড়ার পর অর্থছাড়ের এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে যাওয়ার পর এ নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

মঙ্গলবার (১ মার্চ) পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২২ উপলক্ষ্যে রাজধানীর মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজ কনভেনশন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।

২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা পুলিশ সদস্যদের স্মরণে দিবসটি পালন করে আসছে পুলিশ। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা ১৩৮ জন পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

আইজিপি বলেন, আমাদের জুনিয়র সহকর্মীরা যখন মারা যায় তখন পরিবারটি অথৈ সমুদ্রে পতিত হয়। আগে তাদের পরিবারের জন্য ৫ লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সিভিল স্টাফদের ক্ষেত্রে এটি ছিল ৮ লাখ টাকা। বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণের পর ২০২০ সালে পুলিশের ক্ষেত্রেও অনুদান ৮ লাখ টাকায় নিয়ে আসা হয়।

তখন এই অনুদানের বিষয়টি চলে যায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের হাতে। আগে ৫ লাখ টাকার সময় পুলিশ সুপারের (এসপি) দায়িত্বে থাকায় তারা সবাই টাকা পেয়ে গেছেন। কিন্তু ৮ লাখে উন্নিত হওয়ার পর ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করা ৩৭৭ জনের মধ্যে মাত্র ৭৯ টি পরিবার টাকা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকরা অনেক কাজে ব্যস্ত থাকেন, পুলিশ সদস্যদের টাকা পেতে অনেক দেরি হচ্ছে। তাই এটি যদি আবার এসপির কাছে ফেরত দেওয়া হয় তাহলে পরিবারগুলো সময়মতো টাকাটা পেয়ে যায়।

শান্তিকালীন সময়েও পুলিশ যুদ্ধে লিপ্ত থাকে মন্তব্য করে পুলিশ প্রধান বলেন, এ যুদ্ধ অশান্তির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, যারা সমাজের শান্তি নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ২৪*৭ আমরা যুদ্ধে লিপ্ত। যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত। প্রতিনিয়ত যেহেতু আমরা রাষ্ট্রীয়-সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করছি, সেজন্য আমরা প্রতিবছর আত্মত্যাগ করছি।

যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগগফেরাত ও পরিবারের জন্য সববেদনা এই দুই লাইন পর্যাপ্ত নয়। আমরা আমাদের সহকর্মীকে হারিয়েছি, প্রিয় মুখকে হারিয়েছে তাদের পরিবার। কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছে।

তাই এটিকে আমরা সর্বোচ্চ মহিমান্বিত দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে থাকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপন্ন পরিবরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। যেহেতু আমরা সবসময় যুদ্ধাবস্থার মধ্যে থাকি, প্রফেসনাল সেফটি নিশ্চিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। অসুস্থ হলে সদস্যদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকি।  

২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ১৭ বছরে পুলিশ সদস্যদেরকে প্রায় ৫২ কোটি টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে সহায়তা করা হয়েছে। এ বছরও পৌনে ২ কোটি টাকা চিকিৎসার জন্য সহায়তা করেছি।

তিনি বলেন, হারানো পুলিশ সদস্যদের আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। প্রিয় মুখগুলোকে আমরা ফেরত দিতে পারবো না, কিন্তু পরিবারের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করবো।

কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালটিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, জব হ্যাজার্ডের কারণে আমাদের সদস্যদের শ্বাসকষ্ট, হার্ট, ফুসফুস, কিডনি রোগ বেশি হয়। সস্প্রতি সরকার আমাদের ২৯৬ জন স্টাফ দিয়েছেন, এদের নিয়োগ হলে হাসপাতালটি আরো সুবিধাজনক পর্যায়ে আসবে।

ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু হয়েছে। এ বছর ক্যাথল্যাব চালু করা হবে ও ক্যান্সার ইউনিট চালুর চেষ্টা চলছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, পুলিশের কাজ জান-মালের নিরাপত্তা করা, আইন-শৃঙ্খলা পরিরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। যা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন। এটি বাস্তবায়ন না হলে সমাজে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

পুলিশের ছোট-খাট ঘটনা ঘটলে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে থাকি, অথচ সবসময় সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত।  

২০৪১ সালের লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিজ দায়িত্বের বাইরেও বাড়তি দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা নৈমত্তিক কাজের সঙ্গে শুধু একটি দিন যদি ইউনিয়ন কাউন্সিলে বসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনসাধারণের সঙ্গে বসেন। গ্রামের যুবকদের, বেকারদের বা নানাভাবে ক্ষতিকর মানুষদের পরামর্শ দিয়ে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যদি কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন তাহলে তারা আর অন্ধকারে থাকবে না। এর ফলে দেশ-মানুষ উপকৃত হবে, এ জায়গাটায় আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।

পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করা পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এরপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত মৃত্যুবরণ করা সাতজন পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্বীকৃতি স্মারক তুলে দেন সচিব, আইজিপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। করোনার কারণে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সকল নিহতের পরিবারকে ঢাকায় না ডেকে স্থানীয় পর্যায়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদেরকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। এর আগে মৃত্যুবরণ করা পুলিশ সদস্যদের স্মরণে পুলিশ মেমোরিয়ালে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয় ও তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২২
পিএম/এসআইএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।