ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ইজিবাইক চালিয়ে মেয়েকে বানাচ্ছেন ডাক্তার!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২২
ইজিবাইক চালিয়ে মেয়েকে বানাচ্ছেন ডাক্তার! ইজিবাইক চালক আবুল কালাম আজাদ

খুলনা: সহায় সম্বলহীন আবুল কালাম আজাদ জুট মিল থেকে চাকরি হারানোর পর ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সাংসারিক অভাব অনটনের মধ্যেও স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে ইতানা আজাদ হিরাকে ডাক্তার বানাবেন।

তার সে স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে। আজাদের মেয়ে এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) শেষ বর্ষের ছাত্রী। সবাই এখন তাকে ডাক্তারের বাবা বলে ডাকেন।

মঙ্গলবার (১ মার্চ) রাতে খুলনার খানজাহান আলী রোডে ইজিবাইক চালাতে চালাতে আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমার চার জনের সংসার। দুই ছেলে মেয়ে। মেয়ে ইতানা আজাদ হিরা ২০১৪ সালে দিঘলিয়া এম এ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৬ সালে সরকারি এম এ মজিদ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। ২০১৬ সালের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ১১৯ তম হয়। ছেলে জুবায়ের এবার ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে। রোল ৪ হয়েছে। স্যাররা বলেন তোমার বোন প্রথম শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত প্রথম হয়েছে তুমি কেন এমন করছো? ছেলেটি মেধাবী, কিন্তু মেয়েটির মতো নয়। খেলাধুলায় ঝোঁক বেশি।

তিনি আরও বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী দুই জনেই ১৯৯০ সালে এসএসসি পাশ করেছি। নিজের একটু জায়গা ছিল তা বিক্রি করে দিয়েছি। দিঘলিয়ায় কলেজের পাশে মেয়ের নানা বাড়ি থেকে একটু জমি দিয়েছে সেখানে ঘর করে থাকি।

মেয়ে ডাক্তার হয়ে ওঠার সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বাবা আজাদ বলেন, মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে প্রথম শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত সব ক্লাসে প্রথম হয়েছে সে। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে গোল্ডেন এ+। ছোট বেলা থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। সব সময় পড়ালেখা করতো। ঠিক মতো খেতে দিতে না পারলেও পড়া লেখা ঠিকই চালিয়ে গেছে। মেয়ের ডাক্তারি পড়ার খরচ চালানো আমার কাছে কঠিন ছিল। সব সময় আর্থিক দুশ্চিন্তায় থাকতাম, তারপরও আল্লাহ অন্যের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই ব্যবস্থা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ের সফলতার পেছনে তার শিক্ষকরা অনেক অবদান রেখেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আশা করি আমার মেয়ে ডাক্তার হয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের সেবা করবে।

হাসি দিয়ে আজাদ বলেন, আমার এলাকার সবাই এখন আমাকে ডাক্তারের বাবা বলে ডাকেন। এটা আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয় আমার মতো যারা কষ্ট করে ছেলে-মেয়েকে একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন তাদের সম্মাননা দেওয়া উচিত। তাহলে অন্যরা উৎসাহিত হবে। বুঝবে কষ্ট করেও সন্তানদের বড় কিছু বানানো যায়।

দিঘলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, আবুল কালাম আজাদ অত্যন্ত গরিব মানুষ। তিন বেলা ঠিক মতো খেতে পারে না। সরদার পাড়ায় ঘর করে থাকে। অভাবের সংসারে ইজিবাইক চালিয়ে মেয়েকে ডাক্তার বানাচ্ছে। মেয়েটির অদম্য ইচ্ছা শক্তিই তাকে এ সফলতা এনে দিয়েছে। জীবনজুড়েই আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে দিয়েও লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। তার সাফল্যে আমরাও গর্বিত।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, ১ মার্চ , ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।