ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘জিয়ার মতো সৎ ব্যক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে সৃষ্টি হয়নি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
‘জিয়ার মতো সৎ ব্যক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে সৃষ্টি হয়নি’

ঢাকা: জিয়াউর রহমানের মত সৎ ব্যক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে আর সৃষ্টি হয়নি মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ বলেছেন, চার বছর রাষ্ট্র পরিচালনার পর দেখা গেল তার এক খণ্ডও জমি নেই বাংলাদেশে। ব্যাংকেও নেই কোনো টাকা-পয়সা।

তিনি স্ত্রী, পুত্র ও পরিবারকে যেভাবে লালন-পালন করিয়েছেন সে উদাহরণ খোলাফায়ে রাশেদিনের পর মুসলিম বিশ্বে আর দেখা যায়নি।

মেজর হাফিজ বলেন, জিয়া একজন দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন। তিনি এ দেশে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নামে একটি রাজনৈতিক দর্শন উপহার দিয়ে গেছেন। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রপতি, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন জনপদের সাধারণ মানুষ যার কাছাকাছি যেতে পেরেছেন। যিনি সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, করমর্দন করেছেন। এটি উপমহাদেশের রাজনীতিতে আগে কখনও দেখা যায়নি।

শুক্রবার(১১ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের রচিত ৭টি বইয়ের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাবেক এই মন্ত্রী।

মেজর হাফিজ বলেন, জিয়াউর রহমানকে আমি কাছ থেকে দেখেছি। পাকিস্তান মিলিটারি প্রশিক্ষণ একাডেমিতে তিনি আমার প্রশিক্ষক ছিলেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তিনি আমার সিনিয়র কর্মকর্তা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি আমার ব্রিগেড কমান্ডার ছিলন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে সিলেটের কানাইঘাট জয় করার পর আমরা ধীরে ধীরে সিলেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। সেই সময় কানাইঘাট টু সিলেট একটি লংমার্চ আমরা করেছিলাম।   আপনারা মাও সেতুংয়ের লংমার্চের কথা শুনেছেন। দীর্ঘ সময় সেখানে লেগেছিল। বাট এই এক সপ্তাহব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লগ্নে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল যে সিলেট অভিমুখে লংমার্চ করেছে সেটি আমাদের জাতীয় জীবনের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এ সময় আমরা সিলেট শহর দখল করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্র এড়িয়ে খাবার-দাবার অস্ত্রশস্ত্র পিঠে নিয়ে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১২০০ সৈনিকের কাফেলা চা বাগান ও হাওরের মধ্য দিয়ে সিলেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। এই লংমার্চের সময় আমরা সারারাত হাঁটতাম আর দিনের বেলা জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতাম।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের একটি স্কেচ ম্যাপ ছিল ৮ ফিট বাই ৮ ফিট। সেটার ওপর একটি পলিথিন কাভার ছিল। দিনের বেলা যখন সূর্য উঠে উঠে তখন এই ম্যাপটি বিছিয়ে জিয়াউর রহমান, ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ ও আমি ঘুমাতাম। চোখ খুলে যখন আমার পাশে নিদ্রারত আমার ব্রিগেড কমান্ডার জিয়াউর রহমানকে দেখতাম তখন কখনও কল্পনাও করিনি আমার পাশের এই ব্যক্তির মাত্র চার বছরের মধ্যে দেশের সবচাইতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হবেন। আল্লাহতালা সেটা ঠিক করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণ তাকে সেই পজিশনে নিয়েছে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি কখনও কোনো পদের জন্য লালায়িত ছিলেন না। আমি দেড় বছর তার একান্ত সচিব ছিলাম। তার সর্বোচ্চ স্বপ্ন ছিল তিনি সেনা প্রধান হবেন। তার কখনও রাজনৈতিক অভিলাশ ছিল না। কিন্তু এদেশের মানুষের প্রয়োজনে জনগণই তাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়েছে। জিয়াউর রহমানের মত সৎ ব্যক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে সৃষ্টি হয়নি।

হাফিজ বলেন, বাংলাদেশ বড় না ছোট, তার পারমাণবিক অস্ত্র আছে কিনা সে চিন্তা ভাবনা তার মাথায় ছিল না। তিনি ভেবেছেন এই ব্যর্থ জনপদে তিনিই নেতা, তাকে জনগণ রাষ্ট্রপতি বানিয়েছে দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য। এ জন্যই ভারত যখন পদ্মা নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করেছে, তিনি কোনো দেন-দরবার না করে সরাসরি জাতিসংঘে গিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে ভারত বাধ্য হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের যে চুক্তি হয়েছিল,  সেটি আজ পর্যন্ত সম্পাদিত কয়েকটি চুক্তির মধ্যে সর্বত্তোম। যেখানে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের স্বার্থ তিনি কোনো দিন বিসর্জন দেননি।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায় কোনো দিন কাউকে ছোট করে কথা বলেননি। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু বলে সম্বোধন করে কথা বলেছেন। তার প্রশংসা করে তিনি লিখেছেন ও তার পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তারপরও তার রেহাই নেই। কেনো তিনি সেই ঘোষণা দিলেন। যেই ঘোষণাটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী দিতে পারেনি, সেটি দিয়ে তিনি শাসকগোষ্ঠীর বিরাগভাজন হয়েছেন।

বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, এ রকম সুসজ্জিত মঞ্চে বক্তব্য দেওয়া খুবই সহজ। যখন কামান ও মেশিনগানের গোলা আপনার দিকে ধেয়ে আসবে, সেটিকে বুক পেতে দিয়ে দেশের জন্য নিজেকে বিসর্জন দিতে কয়জন রাজনৈতিক নেতা আছেন? কিন্তু তিনি নিজের কথা ভাবেননি। ভেবেছেন এই মুহূর্তে দেশের মানুষকে রক্ষা করা তাদের পবিত্র দাবি। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন।

ঢাবির সাবেক ভিসি প্রফেসর আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, সাবেক মন্ত্রী এহসানুল হক মিলন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা,  ১১মার্চ, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।