ঢাকা, সোমবার, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৭ মে ২০২৪, ১৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সুন্দরবনে অক্টোবরে শুরু হচ্ছে বাঘশুমারি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২২
সুন্দরবনে অক্টোবরে শুরু হচ্ছে বাঘশুমারি ফাইল ছবি

খুলনা: আগামী অক্টোবর মাস থেকে সুন্দরবনে আবারো শুরু হচ্ছে বাঘশুমারি। ক্যামেরা ফাঁদ পদ্ধতিতে চার মাস ধরে চলবে এ কার্যক্রম।

গত ২৩ মার্চ প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’র আওতায় এতে গণনা করা হবে বাঘের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত বনে থাকা হরিণ ও শূকরের সংখ্যাও।

প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে বাঘ স্থানান্তর, অন্তত দুটি বাঘে স্যাটেলাইট কলার স্থাপন ও মনিটরিং করা, বাঘের পরজীবীর সংক্রমণ ও অন্যান্য ব্যাধি এবং মাত্রা নির্ণয়, উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হবে। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) খুলনা প্রেসক্লাবে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানানো হয়।

খুলনার সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের তথ্যকেন্দ্রে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’র বিস্তারিত তুলে ধরেন বন কর্মকর্তারা।

খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল এবং সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা এম এ হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে বিরূপ মন্তব্য করছে। এ কারণে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি জানান, প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও সুরক্ষার কাজ করা হবে। এর মধ্যে তিন কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে বাঘ গণনায়। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার জন্য বনের বিভিন্ন এলাকায় ২০০টি বিশেষ ক্যাটাগরির ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

সুন্দরবনে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও চারটি রেঞ্জের কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপের ১৮৫ জন সদস্য রয়েছেন। প্রকল্পের আওতায় তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, বিশেষ পোশাক সরবরাহ ও প্রতি মাসে বনকর্মীদের সঙ্গে মাসিক সভা করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন প্রায় প্রতি বছর আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের যে অংশে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি, সে জায়গায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ এবং তাৎক্ষণিক আগুন নেভানোর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, পাইপ ও ড্রোন কিনবে বন বিভাগ। এছাড়া বাঘ যেন লোকালয়ে চলে না আসে সেজন্য জনবসতি আছে এমন ৬০ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের ঘেরাও দেওয়া হবে। ঘূর্ণিঝড় ও উচ্চ জলোচ্ছ্বাসে বাঘ যেন নিরাপদ আশ্রয় পায় সেজন্য বনের মধ্যে ১২টি মাটির কেল্লা তৈরি করা হবে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিহির কুমার দো বলেন, কেবল প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এখনো কোনো অর্থছাড় হয়নি। প্রকল্প পরিচালকও নিয়োগ করা হয়নি। তারা আশা করছেন, আগামী অর্থবছরে হয়ত অর্থ ছাড় করা হবে। এরপর বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলেই তারা বাঘ গণনার কাজ শুরু করবেন। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়ত চার মাস লাগবে। এরপর শুরু হবে প্রতিবেদন তৈরির কাজ।

এছাড়া ২০২২ সালে বিশ্ব বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, বাঘ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এমন দেশে ২০ জনের শিক্ষা সফরসহ ৫০০ জনের বিশেষ প্রশিক্ষণের সংস্থান এ প্রকল্পে রাখা হয়েছে।

সুন্দরবনে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালে আইলা ও ২০২১ সালে ইয়াসের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বনের সমস্ত এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণি আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করে। বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণি ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবনে ১২টি মাটির কিল্লা স্থাপন করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

প্রকল্পে বিশেষ প্রশিক্ষণ, জরিপ সম্পন্ন, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, প্রতিবেদন তৈরি ইত্যাদি কার্যক্রমে স্বল্পমেয়াদে ১২ জন পরামর্শক বিশেষজ্ঞের সংস্থান রাখা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের সকল জরিপ ও গবেষণার কার্যক্রম প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হবে।

বন বিভাগের মতে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে তিন হাজার ৮৪০টি বাঘ প্রকৃতিতে টিকে আছে। সুন্দরবনে ক্যামেরা ফাঁদ পদ্ধতিতে সবশেষ বাঘ জরিপ হয়েছিল ২০১৮ সালে। সে বার শনাক্ত হয় ১১৪টি বাঘ, তার মধ্যে পূর্ণ বয়স্ক ৬৩টি, ১৮টি ১২ থেকে ১৪ মাস বয়সী এবং ৩৩টি ছিল শাবক।

এদিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এমন দেশে অভিজ্ঞতা অর্জনে ২০ জন সরকারি কর্মকর্তা শিক্ষা সফরে যাবেন। এর জন্য সম্ভাব্য দেশ হিসেবে তারা ভারত বা নেপালকে বিশেষ বিবেচনায় নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২২
এমআরএম/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।