ঢাকা, শনিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ধর্ষণের পর রক্তক্ষরণ দেখে শিশুকে হত্যা, ফের ধর্ষণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২২
ধর্ষণের পর রক্তক্ষরণ দেখে শিশুকে হত্যা, ফের ধর্ষণ

নোয়াখালী: ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সেই শিশু আছমা আক্তারকে (৫)। শুধু তাই নয়, হত্যার পর আবারও শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়।

পরে পাশের বাড়ির শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ গুম করা হয়।

ঘটনার পর শিশু আছমা আক্তারের চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনায় এ তথ্য দিয়েছেন।

রোববার (৩ এপ্রিল) বিকেলে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি শাহাদাত হোসেনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নবনীতা গুহ আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে আদালতের নির্দেশে আসামি শাহাদাত হোসেনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শিশু আছমা আক্তারকে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা ও মরদেহ গুমের মামলায় গ্রেপ্তার আসামি শাহাদাত হোসেনের আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গিয়াস উদ্দিন।  

শাহাদাতের জবানবন্দির বরাত দিয়ে তিনি জানান, শাহাদাত স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, নির্যাতনের শিকার শিশুটি তার চাচাতো বোন। তিনি ঘটনার দিন (২৪ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে বাড়ির সামনের বড়ই গাছের নিচে থেকে তাকে ডেকে নিয়ে তার ঘরে যান। সেখানে অন্য কেউ ছিলো না।

ওসি আরও জানান, শাহাদাত স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, তিনি শিশুটিকে মুখ ও হাত-পা চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছেন। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দেয়। তখন আছমা চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলে তার নাক-মুখ চেপে ধরে তাকে মেরে ফেলেছেন।  

এরপর মরদেহ বস্তায় ভরে বস্তাটি নিজের কক্ষের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন। পরে সন্ধ্যার দিকে পাশের বাড়ির নুর নবীর ঘরের পশ্চিম পাশের শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খুলে সেখানে লুকিয়ে রাখেন।

পুলিশ জানায়, নিখোঁজ ঘটনার ১০ দিনের মাথায় সন্দেহভাজন হিসেবে শাহাদাত হোসেনকে আটক করা হয়। পরে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি আছমাকে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা ও মরদেহ গুম করার কথা স্বীকার করেন। পরে তার তথ্য অনুযায়ী শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাশের বাড়ির একটি শৌচাগারের ময়লার ট্যাংক থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
 
আছমা আক্তার চাটখিল উপজেলার বদলকোট ইউনিয়নের মেঘা গ্রামের মৃধা বাড়ির মো. শাহজাহানের মেয়ে। পাঁচ বোনের মধ্যে আছমা ছিল সবার ছোট। উদ্ধারের পর শিশু আছমার মরদেহ শনিবার রাতে চাটখিল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে রোববার ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়না তদন্তের পর জানাজা শেষে বিকেলে পারিকারিক কবরস্থানে আছমার লাশ দাফন করা হয়।

নিহত আছমার বাবা মো. শাহজাহান স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতা কিংবা বিরোধ নেই। আমি মেয়ের হত্যাকারী শাহাদাতের ফাঁসি চাই। আইনের ফাঁক-ফোঁকরে যাতে সে কয়দিন পর ছাড়া পেয়ে না যায়। সে ছাড়া পেলে এভাবে আরও ঘটনা ঘটাবে। কারণ সে এমনিতে খারাপ প্রকৃতির।

এদিকে নিখোঁজ শিশু আছমা আক্তারের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে চাটখিলের বদলকোট ইউনিয়নের মেঘা গ্রামের মৃধা বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। আছমার চার বোন ও মা-বাবার আহাজারি থামাতে পারছেন না আশপাশের বাড়ির বাসিন্দা ও আত্মীয়-স্বজনরা।

চাটখিল থানার ওসি আরো জানান, শিশু আছমাকে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা ও মরদেহ গুমের ঘটনায গ্রেপ্তার শাহাদাতের বিরুদ্ধে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শিশুটির বাবা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।