ঢাকা, সোমবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নামেই বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতাল, নেই ডাক্তার-নার্স

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
নামেই বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতাল, নেই ডাক্তার-নার্স

বান্দরবান: অব্যবস্থাপনা আর নানা অনিয়মের কারণে বন্ধ হতে বসেছে বান্দরবান একমাত্র ডায়াবেটিক হাসপাতাল। নিজস্ব ভবন এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পরিচালনা, ডাক্তার আর নার্সের অভাবে হাসপাতালটির সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ডায়াবেটিক রোগীরা।

সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের ডায়াবেটিকস রোগীদের সেবায় লক্ষ্য নিয়ে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে বান্দরবান ডায়াবেটিক সমিতির পরিচালনায় যাত্রা শুরু করে বান্দরবানের একমাত্র ডায়াবেটিক হাসপাতালটি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রচুর অনুদান পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, কিন্তু হাসপাতালের যাত্রার কয়েক বছর সব ঠিকঠাক থাকলেও বর্তমানে কমিটির সঠিক দেখভালের অভাবে হাসপাতালের সর্বত্র ময়লা আর আবর্জনার স্তূপ জমতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয় হাসপাতাল হলেও এখানে বর্তমানে নেই কোন ডাক্তার, নার্স। হাসপাতালের এমন অবস্থায় বিড়ম্বনায় পড়েছে ডায়াবেটিক রোগীরা।

ডায়াবেটিকস হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আয়েশা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, আগে বান্দররবান ডায়াবেটিক হাসপাতালে ডাক্তারও ছিল সেবাও ভালো ছিল। তবে এখন সেবাও নেই ডাক্তারও নেই।

তিনি আরও জানান, অব্যবস্থাপনার ফলে এই ডায়াবেটিকস হাসপাতালে এখন রোগীরা আর আসে না। যাদের ডায়বেটিস রোগ আছে তারা বাধ্য হয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে কেরানীহাট ও চট্টগ্রাম গিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।

ডায়াবেটিকস হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বান্দরবানের নিউ গুলশান এলাকার বাসিন্দা মো. শামসুল হক বাংলানিউজকে জানান, নামেই বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ডাক্তার আর নার্স কিছুই নেই। হাসপাতাল ভবনটির চেহারা দেখলে মনে হয় জ্বরে আক্রান্ত।

মো.শামসুল হক আরও জানান, পরিচালনা কমিটির অদক্ষতার কারণে জেলার একমাত্র এই হাসপাতালটি এখন বন্ধের পথে আর আমরা গরীব রোগীরা পাচ্ছি কষ্ট।

সূত্রে জানা যায়, বিগত দিনগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন ডায়াবেটিকস রোগী এখানে সেবা নিলেও এখন কোন ডাক্তার না থাকায় রোগীর দেখা নেই হাসপাতালে। শুধুমাত্র একজন ম্যানেজার, একজন আয়া, একজন নৈশ প্রহরী আর একজন টেকনেশিয়ান রোগীদের রক্তের পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিয়ে শেষ করছে তাদের প্রতিদিনের দায়িত্ব।

বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার ওয়াং ম্যা থুই মারমা বাংলানিউজকে জানান, ডায়াবেটিকস হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। হাসপাতালে একজন ম্যানেজার, একজন আয়া, একজন নৈশ প্রহরী আর একজন টেকনেশিয়ান রয়েছে তবে কোন ডাক্তার আর নার্স না থাকায় কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে।

ম্যানেজার ওয়াং ম্যা থুই মারমা বাংলানিউজকে আরও জানান, বর্তমানে হাসপাতালে শুধুমাত্র রোগীদের রক্ত পরীক্ষা করা হয় আর কোন সেবা দেওয়া হয় না, রোগীরা রক্ত পরীক্ষার রির্পোট নিয়ে গিয়ে বাইরে ডাক্তারদের দেখিয়ে ওষুধ সেবন করে।

বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতালের টেকনেশিয়ান ম্যাং ক্য হ্লা মারমা বাংলানিউজকে জানান, আগে হাসপাতালে প্রতিদিনই ৫০ থেকে ৬০জন রোগী আসতো আর এখন হাসাপাতালে কোন ডাক্তার না থাকায় রোগী কমে গেছে।

এদিকে কমিটির সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে সঠিকভাবে হাসপাতালটিকে পরিচালনা করতে না পারলেও শীঘ্রই নতুন কমিটি গঠন এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করে পুরোদমে হাসপাতালটি চালু করার আশাবাদ জানান হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।

বান্দরবান ডায়াবেটিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ ইসলাম বেবী বাংলানিউজকে বলেন, আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতাল এর কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে তবে শিগগিরই নতুন কমিটি গঠন এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করে পুরোদমে বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতাল আমরা চালু করবো এবং রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেব।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।