ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তেঁতুলতলা মাঠ আপাতত থানার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২২
তেঁতুলতলা মাঠ আপাতত থানার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা: কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ কখনও খেলার মাঠ ছিল না জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তেঁতুলতলা মাঠ আপাতত থানার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের একথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এর আগে তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক ও অধিকারকর্মী খুশি কবির, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিব এবং সংস্কৃতিকর্মী সঙ্গীতা ইমাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেটাকে তেঁতুলতলা মাঠ বলছেন, সেটা কখনো মাঠ ছিল না। এটা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। ঢাকা শহরে যে নতুন নতুন থানা ভবন হচ্ছে বেশির ভাগই ভাড়া বাড়িতে। ভাড়া বাড়িতে থাকার কারণে আমাদের পুলিশ ফোর্স নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। সেজন্য এগুলোকে স্থায়ী স্থানে নেওয়ার জন্য আমরা নিয়মানুযায়ী ডিসির (জেলা প্রশাসক) কাছে বলেছিলাম, ঢাকা শহরের কোনো জায়গায় জমি অধিগ্রহণের জন্য। ঢাকার কলাবাগানের কোনো জায়গায় দেওয়া যায় কিনা বলেছিলাম। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে এই জায়গাটি বরাদ্দ দেন। সেই জায়গাটির যে মূল্য, তা ঢাকা মেট্রোপলিট পুলিশ জমা দেওয়ার পর ডিসি জায়গাটি হস্তান্তর করে দিয়ে যান। এটা ছিল মূল কথা।

তিনি আরও বলেন, আমরা শুনেছি লোকালয়ের পাশে খালি জায়গা, এখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করতো। একটু আলাপচারিতার জন্য এই জায়গাটি ছিল। এখন সবাই এই জায়গা নিয়ে নানানভাবে কথাবার্তা বলছেন।

‘আমাদের স্পষ্ট কথা, আমাদের জায়গা প্রয়োজন। কলাবাগানের একটি থানা ভবন প্রয়োজন। সেটার দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বলছি, এই জায়গাটা আমরা পেয়েছি। এর চেয়ে যদি ভালো, উপযুক্ত জায়গা ওখানকার মেয়র সাহেব কিংবা অন্য কেউ যদি ব্যবস্থা করতে পারেন তখন আমরা সেটা বিবেচনা করবো। আপাতত আমাদের থানার জন্য এটাই নির্দিষ্ট জায়গা, সরকারিভাবে এটা ব্যবস্থা হয়েছে। ’

তাহলে তেঁতুলতরা মাঠে থানা ভবনের নির্মাণ কাজ হবে—এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্মাণ কাজ হবে কি হবে না, সেটা হলো পরের কথা। জায়গাটি পুলিশের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ হবে কি হবে না, সেটা পরে সিদ্ধান্ত হবে। বরাদ্দ যেহেতু হয়েছে, সেই জায়গাটি পুলিশের। যেহেতু এটা পুলিশের সম্পত্তি। কিছুক্ষণ আগে যারা আসছিলেন তারাও আমাদের কাছে একটা আবেদন করেছেন—বিকল্প কিছু করা যায় কিনা, সেই পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য, আপনারাও একটু খোঁজাখুজি করুন, যাতে এই সুযোগটা থেকে এই এলাকার মানুষ যাতে বঞ্চিত না হয়। থানাও জরুরি দরকার, বাচ্চাদেরও একটা রিক্রিয়েশন দরকার। সেজন্য বলছিল আপনারা কনস্ট্রাকশনটা না করে আমরাও খুঁজি দেখি, এটাই তাদের আবেদন ছিল। আমি বলেছি, আমরা তো এখনই কনস্ট্রাকশনে যাচ্ছি না। খুঁজুন আমরা দেখবো। আপনারা যদি এর চেয়ে ভালো অফার দিতে পারেন আমরা অবশ্যই দেখবো। এটাই বলা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখানে মনে হয় ২০ কাঠা জমি, খুব বড় জমিও কিন্তু নয়। ফুটবল খেলার মাঠ এরকমও কিছু নয়। টেনিস খেলার মাঠ হবে দুটো, সেই রকমও কিছু নয়। এটা খুবই ছোট জায়গা। এটা তো আপনারা নিজেরাও বোঝেন। চিকন-লম্বালম্বি জায়গা, জায়গাটিও সুন্দর কিংবা ভালো অবস্থায় সেই রকমও কিন্তু নয়। তারা যেহেতু একটা আবেদন করে গিয়েছেন, আমরা দেখব। আমরা যদি এর চেয়ে উপযোগী কিছু পাই, যেহেতু আমরা টাকা দিয়ে ফেলেছি, সেটার কী হবে। সবকিছু আমরা আলোচনা করবো।

মাঠ রক্ষা নিয়ে একটা পাবলিক সেন্টিমেন্ট দাঁড়িয়ে গেছে—এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমিও বলছি, আমার থানা দরকার। সেটা তো পাবলিকের বুঝতে হবে। কারণ আমি যদি পাবলিককে সুরক্ষা না দিতে পারি, নিরাপত্তা না দিতে পারি। তখনও তো পাবলিক সেন্টিমেন্ট আমাদের বিপক্ষে আসবে। জায়গাটি আমরা নির্বাচন করিনি। জমিটি আমাদের অধিগ্রহণ করে দিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি বলবো এখন এটা পুলিশের সম্পত্তি। এখন একটি আবেদন এসেছে, সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চিন্তা-ভাবনা করব কী করা যায়।

প্রাচীর নির্মাণ স্থগিত রাখার জন্য ডিএমপি কমিশনারকে বলবেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি, আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করব।



স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর খুশি কবির বলেন, এখানে যে কাজটি হচ্ছে, সে জিনিসটা আমরা চাচ্ছিলাম বন্ধ করার জন্য। আমরা চাচ্ছি যে, এবারের ঈদের জামাত ওখানেই হোক। তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, আলোচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তিনি চেষ্টা করবেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খেলার মাঠটির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ফিল করছেন। কিন্তু তাঁরা ২৭ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছেন। তখন আমরা বলেছি, সেটা তো সরকারি ট্রেজারিতেই আছে। ওই এলাকায় আরও পরিত্যক্ত জায়গা আছে। একটা জায়গার কথা ইকবাল ভাই স্পষ্ট করে বলেছেন।

মাঠে দেয়াল নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, পুলিশের সাথে এলাকাবাসী মুখোমুখি হোক, এটা আমরা চাই না। ঈদের জামাতটা হতে পারবে না যদি এখানে দেয়াল হয়, তাই এটা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। মন্ত্রী বলেছেন, এ ব্যাপারে আমি ডিএমপি কমিশনারের সাথে কথা বলছি।

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, আমরা কিছুটা আশা নিয়ে এসেছি। তিনি হতাশ করেননি, প্রত্যেকটি কথাই শুনেছেন। তিনি বলেছেন যে, আমি নিজেও ব্যাপারটি ফিল করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।