ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মুখে বিষ ঢেলে মারতে চাওয়া সেই শিশুই আজ নারী পুলিশ সদস্য

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২২
মুখে বিষ ঢেলে মারতে চাওয়া সেই শিশুই আজ নারী পুলিশ সদস্য বামে মা বুলবুলি বেগম ও ডানে মেয়ে লিজা খাতুন

রাজশাহী: ২০ বছর আগে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় বুলবুলি বেগম (২০) ও রিফাজ উদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সংসারে নানা কারণে অশান্তি লেগেই থাকতো।

দুই বছর পর তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। প্রথম সন্তান মেয়ে বলে রিফাজ উদ্দিন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই মেয়েকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে একপর্যায়ে মুখে বিষ দেন আপন বাবা। তখন মেয়েটির বয়স সবে মাত্র ৯ মাস। কিন্তু বিষ দেওয়ার পর পরই বিষয়টি টের পেয়ে সে সময় মা বুলবুলি মেয়েকে উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান। সুস্থ হয়ে ওঠে মেয়েটি। সেই মেয়েটিই আজ বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। তিনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার লিজা খাতুন।

লিজার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকে বাবার কাছ থেকে কোনো আর্থিক সাহায্য না পাওয়ায় দারিদ্র্যেতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। মানুষ হয়েছেন মামার বাড়িতে। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল লিজার। বর্তমানে তিনি শাহাদৌলা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়েছেন।
এর আগে গত মাসে পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন লিজা। তারপর যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে চাকরি পান তিনি।

লিজা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ১৫০ টাকা দিয়ে প্রথমে চাকরির আবেদন করি। এরপর উচ্চতা, শরীর চর্চা, লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভাসহ সাতটি ধাপ পার করে আমার যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পেয়েছি। এজন্য কারও সুপারিশের প্রয়োজন হয়নি। আমি রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন স্যার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, এই পর্যন্ত আসার পথ আমার জন্য সহজ ছিল না। অনেক ছোটবেলা থেকে বাবা নেই, মামার বাড়িতে থেকে বড় হয়েছি। খালা ও মামার সহযোগিতায় স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে অনার্সে ভর্তি হয়েছি। বড় হওয়ার পর শুনেছি বাবার নিষ্ঠুরতার কথা। তবে বাবাকে এখনও দেখা হয়নি।

লিজার মা বুলবুলি বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এর মধ্যেই মেয়ে হওয়ার পর থেকে নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে নিজের মেয়ের মুখে বিষ দেয় তার বাবা রিফাজ। তবে পরে এ বিষয়ে ভুল বুঝে অনুশোচনা করে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর ঢাকায় চাকরি করতে যাওয়ার নাম করে আর ফিরে আসেনি। তারপর অনেক কষ্ট কর মেয়েকে মানুষ করেছি।

এ বিষয়ে রাজশাহীর এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, লিজা একজন মেধাবী পুলিশ সদস্য। নিয়োগের সময় অনেক প্রার্থী ছিল। সেখানের নকআউট সিস্টেমে সাতটি পরীক্ষার ধাপ পার করে নিজ যোগ্যতায় নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। সরকারের নতুন চাকরি প্রদ্ধতির কারণে অনেক অসচ্ছল পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা পুলিশের চাকরি পাচ্ছেন। যারা আগামীতে দেশ ও জাতি গঠনে দৃঢ় ভূমিকা পালন করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২২
এসএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।