ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকায় ফিরছে মানুষ, ব্যস্ত সদরঘাট

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৪ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২২
ঢাকায় ফিরছে মানুষ, ব্যস্ত সদরঘাট

ঢাকা: প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। ঈদ-উল-ফিতরের ছুটির পর অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় রাজধানীতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় নিশ্চিন্তে পরিবার নিয়ে গ্রামে ঈদ কাটিয়ে হাসিমুখে মানুষ কর্মস্থলে ফিরছেন। ফাঁকা ঢাকা ফের সরগরম হতে শুরু করেছে। ঢাকামুখো মানুষের ভিড়ে আস্তে আস্তে চিরচেনা রাজধানী তার পুরনো চেহারায় ফিরছে।

এদিকে ফের কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। ভোর থেকে লঞ্চের হর্ন ও যাত্রীদের পদচারণায় সদরঘাট আগের রুপে ফিরেছে। অনেকেই ঘাটে নেমে সরাসরি রওনা করেছেন কর্মস্থলে যোগ দিতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততাও বাড়তে থাকে আশপাশের এলাকার। সকাল ৮টা পর্যন্ত ৭৩ টি লঞ্চে এক লাখেরও বেশি যাত্রী ঢাকায় প্রবেশ করেছে। ফলে লঞ্চ ও যাত্রীদের চাপে টার্মিনালে জনজট ও লঞ্চজট দেখা গেছে। কালবৈশাখী নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও তেমন পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় নিরাপদে ফিরতে পেরে আনন্দিত যাত্রীরা।

শনিবার (০৭ মে) রাজধানীর সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের টানা ছুটি শেষে রাজধানীমুখী যাত্রীদের পদচারনায় সদরঘাট যেন তার স্বরূপে ফিরে এসেছে। ভোর থেকেই হকারদের হাক ডাক, লঞ্চের হর্ন, রিকশা, সিএনজি চালকদের হাক ডাকে কর্মচঞ্চলতা ফিরে পেয়েছে। এদিন ভোর থেকেই বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, চরফ্যাশন, হুলারহাট, ভান্ডারিয়া, লালমোহনসহ দেশের বিভিন্ন রুটের যাত্রী বোঝাই লঞ্চ টার্মিনালে ভিড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টার্মিনালে লঞ্চ ও যাত্রী বাড়তে থাকে।

এসময় টার্মিনালে লঞ্জজটের সৃষ্টির ফলে অনেক লঞ্চকে টার্মিনালে ভিড়তে ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কোন কোন লঞ্চ টার্মিনালে ভিড়তে না পড়ে অন্য লঞ্চের মাধ্যমে যাত্রীদের নামাতে দেখা গেছে। একই সময়ে অনেক লঞ্চ চলে আসায় টার্মিনালের অতিরিক্ত চাপ কমাতে বিআইডব্লিউটিএ এর কর্মকর্তাদের বার বার মাইকিং করে দ্রুত যাত্রী নামিয়ে টার্মিনাল ছাড়ার নির্দেশ দিতে শোনা গেছে। যাতে ঘাটে আসা অন্য লঞ্চগুলোও যাত্রীদের নিরাপদে নামাতে পারে।

এছাড়া ফিরতি মানুষের পাশাপাশি শনিবারও ঢাকা ছাড়তে সদরঘাটে এসেছেন অনেকে। যারা আগে ছুটি পাননি বা ঈদের আগে ভ্রমণের ঝুঁকি এড়াতে চেয়েছিলেন, তারা এখন ঢাকা ছাড়ছেন। বিশেষ করে চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মুলাদী, চরফ্যাশন, হাতিয়াসহ কয়েকটি রুটের লঞ্চে ভিড় দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের।

রাজধানীর উত্তরা থেকে এসেছেন চাঁদপুরগামী ফয়েজুর রহমান তিনি বলেন, দোকানে কাজ করি, মালিক ছুটি দেয়নি। শনিবার থেকে ছুটি পেয়েছি তাই বাড়ি যাচ্ছি। প্রতি ঈদেই এমন সময় যাওয়া হয়, এসময় যাত্রীর চাপ কম থাকে, সুন্দরভাবে যাওয়া যায়।

ভোলা থেকে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে আবার ঢাকায় ফিরলাম। আসতে তেমন কোন ভোগান্তি হয়নি। ঝড় নিয়ে আতঙ্ক ছিল, কী হয় না হয়। ভালভাবে পৌঁছে গেছি।

সুন্দরবন লঞ্চের স্টাফ সবুজ বলেন, ছুটির শেষ দিন হওয়ায় আজ যাত্রীর চাপ বেশি। গত দুই বছর করোনার জন্য যাত্রী কম ছিল। এবছর করোনা কমায় মানুষ গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গেছে। ফলে ঈদে যাওয়া ও আসা যাত্রী অনেক ছিল। সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ফলে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। যাই হোক নিরাপদে পৌঁছাতে পেরেছি।

পুরাণ ঢাকার ফরাসগঞ্জের ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের ছুটি শেষে গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরলাম। এসময় বাড়ি যেতে আসতে অনেক কষ্ট হয়। তবে এবার ছুটি বেশি হওয়ায় তেমন কোন কষ্ট হয়নি। লঞ্চে যাত্রীদের ভিড় ছিল সেটা অতিরিক্ত না। ঈদের সময় যেমন হওয়ার কথা তেমনই হয়েছে। তবে অন্যান্য ঈদের থেকে অনেক ভালোভাবে এবার যেত এবং আসতে পেড়েছি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হারুণ শেখ পরিবারের সঙ্গে ঈদ শেষে বরিশাল থেকে ঢাকায় ফিরেছেন।

তিনি বলেন, রোববার থেকে অফিস খোলা তাই চলে আসতে হল। অনেক দিন পর পর দেখা হয় পরিবারের সঙ্গে। তাই মনটা একটু খারাপ লাগছে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না থাকলেও কোন ফাঁকা ছিলনা। ঈদের পর ভিড়তো একটু থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। তবে সদরঘাট এসেছি এক ঘণ্টা আগে মাত্র লঞ্চ থেকে নামতে পারলাম। কারণ লঞ্চ টার্মিনালে ভিড়তে পারছিলেন না। এছাড়া পথে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

নৌ যান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজ ঘাটে গত দুই দিনের তুলনায় লঞ্চ ও যাত্রী দুনোই বেশি।

রোববার (৮ মে) থেকে সরকারি অফিস পুরোদমে শুরু হবে। ফলে সকাল থেকেই ঘাটে লঞ্চ আসতে শুরু করেছে, কিছু লঞ্চ ছেড়েও গেছে। পুলিশ বাহিনী সার্বক্ষণিক সতর্ক আছে। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, এখন পর্যন্ত তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এবিষয়ে সদরঘাট নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা জানান, আজ বলা যায় ঈদের ফিরতি যাত্রা শুরু হয়েছে। শনিবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত টার্মিনালে ভিড়েছে ৭৩ টির মতো লঞ্চ। গতকাল যে লঞ্চগুলো ২০০ যাত্রী নিয়ে আসতে দেখা গেছে। আজ সেখানে এক থেকে দেড় হাজার যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছে। এতে এক লাখের ওপরে নরগরবাসী পরিবারের সঙ্গে ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরেছে। আর যাত্রী নিয়ে ঘাট থেকে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে ৩২ টি লঞ্চ। তবে ভোরে আসা বিভিন্ন রুটেরলঞ্চগুলো যাত্রী ছাড়াই চলে যেতে দেখা গেছে ঈদ ফেরত নগরবাসীদের আনতে। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সব লঞ্চ সময় মতো ছেড়েছে।

তারা আরও জানান, এবারের ঈদের যাত্রা স্বস্তির হয়েছে। নৌপথে কোথাও কোন দুর্ঘটনা খবর পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের খবরও আমরা পাইনি। ভাড়ার ক্ষেত্রে যেটা হয়। লঞ্চ মালিকরা প্রতিযোগিতা করে যাত্রী টানতে বছরের অন্যান্য সময় সরকারের নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম ভাড়া নিয়ে থাকে ঈদের সময় সরকারের নির্ধারিত ভাড়া রাখে। তখন যাত্রীরা বলে ভাড়া বেশি নিচ্ছে। এছাড়া অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারী, পকেটমারদের খপ্পরে পড়েছে এমন কোন খবরই পাইনি।

উল্লেখ্য, দেশের মুসলিমদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করা হয় ৩ মে মঙ্গলবার। এবার সরকারি ছুটি ১ মে রোববার থেকে ০৪ মে বুধবার পর্যন্ত থাকলেও অনেকেই এক দিনের বৃহস্পতিবারের এক্সট্রা ছুটি নিয়ে পুরো সপ্তাহের ছুটি নিয়েছেন। এর আগের ২৯ ও ৩০ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার পড়ায়। চাকুরীজীবী নগরবাসীরা তাদের পরিবার নিয়ে

ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের উদ্দেশে ২৮ এপ্রিল থেকেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২২
জিসিজি/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।