ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পাবনায় ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২২
পাবনায় ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

পাবনা: পাবনা সাঁথিয়া উপজেলায় ভুল চিকিৎসায় শ্যামলী খাতুন (২৩) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে একটি বেসরকারি ক্লিনিকের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।  

শুক্রবার (১৩ মে) বেসরকারি রুবিয়া-ফয়েজ ডায়াবেটিক ও জেনারেল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, গাইনি চিকিৎসক না হয়েও ক্লিনিকটির পরিচালক ডা. মো. আব্দুর রহিম খান নিজে ওই প্রসূতি মায়ের অস্ত্রোপ্রচার করেন। ফলে ভুল অপারেশনের কারণে প্রসূতির মৃত্যু এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে নবজাতকটি।  

গত শুক্রবার (১৩ মে) জেলার সাঁথিয়া উপজেলার রুবিয়া-ফয়েজ নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে শ্যামলী খাতুন নামে এক প্রসূতির। তিনি উপজেলার তেঁতুলতলা স্বরূপ গ্রামের দিনমজুর খাইরুল ইসলামের স্ত্রী। প্রসব বেদনা নিয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উপজেলার একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন তিনি। সেই রাতেই স্থানীয় দালাল চক্র পরিবারকে ফুসলিয়ে পার্শ্ববর্তী এই ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করান। শুক্রবার সকালে ক্লিনিক মালিক চিকিৎসক ডা. মো. আব্দুল রহিম খান নিজেই ওই প্রসুতির অস্ত্রোপচার করেন। সে সময় ক্লিনিকে কোনো গাইনি চিকিৎসক এমনকি অ্যানেস্থেসিয়া করারও কেউ ছিলেন না। ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে অধিক রক্তক্ষরণে অপারেশন থিয়েটারেই শ্যামলীর মৃত্যু হয়। এসময় নবজাতক শিশুর জন্ম হলেও তার দেহের বিভিন্ন স্থানে ছুরির আঘাত রয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবার।  

এদিকে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধামাচাপা দিতে রোগীর স্বজনদের ডেকে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রোগীর মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।

রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা দিয়ে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ভুল চিকিৎসার কারণে কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে সব ঘটনাই অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ফেলে। এই সব বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠিন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পাশাপাশি ওই চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিলের দাবি করেন তারা। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনি সহযোগিতাসহ ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য আর্থিক ব্যবস্থার দাবি জানান সবাই।

অভিযুক্ত ক্লিনিকের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল রহিম খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব নিয়ম অনুসরণ করেই তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অপারেশনের সময় সেখানে গাইনি চিকিৎসক ডা. মাহফুজা আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। রোগীর অন্য সমস্যা ছিল।

এদিকে পরিচালকের এই দাবি মিথ্যা বলেছেন ক্লিনিকটির গেস্ট ডাক্তার ডা. মাহফুজা আহম্মেদ। তিনি বলেন, গতকাল ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। অমি প্রতি শুক্রবার সেখানে চেম্বার করি। আমার জন্য অনেক রোগী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওষুধ কোম্পানির অনেকেই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঘটনার দিন আমি একটু দেরিতে সেখানে গিয়েছি। তবে কি কারণে তিনি আমার নাম ব্যবহার করছেন সেটা তিনিই বলতে পারবেন।

ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহম্মেদ বলেন, অতীতে এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে আমাদের কাছে। এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ওই ডাক্তারের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই সময় সেখানে কোনো গাইনি ডাক্তার ছিলেন না। তিনি তার নিজের দোষ গোপন করার জন্য অন্যের ওপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।

সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মো. সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনা প্রাথমিভাবে আমরা শুনেছি তবে এখনো থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এখন আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। তাই প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন তারা।  

এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে প্রশাসন। আর লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।