ফরিদপুর: ফরিদপুরে হঠাৎ বেড়েছে পদ্মার পানি। এতে তলিয়ে গেছে নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের কয়েকশ একর জমির ফসল।
গোয়ালন্দ পয়েন্টের গেজ রিডার সালমা খাতুন সোমবার সকালে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ২৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ৬.৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গি এলাকা। নদীর দুই প্রান্তেই তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত। পুরো চরের বেশিরভাগ জুড়ে বাদামের আবাদ হয়েছিল। হঠাৎ পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে মাঠের বাদাম গাছ। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়া অপরিপক্ক বাদাম তুলছেন চাষিরা। এছাড়া তলিয়ে যাওয়া ধান ও তিলও তুলছে কৃষকরা।
বাদাম চাষী রুস্তম আলী ও রমজান শেখ বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে প্রায় ১৫ বিঘা জমির বাদাম গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে এখন পানির নিচে। তলিয়ে যাওয়া বাদাম চড়া মূল্যের দিনমজুর নিয়ে তুলতে হচ্ছে। বাদাম এখনও পরিপক্ক হয়নি, তাও তুলতে হচ্ছে। একেবারে সর্বনাশ হয়ে গেছে। বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হলো।
এলাকার আলেয়া বেগম বলেন, এবার বাদাম খুব ভালো হয়েছিল। এক একর বাদাম চাষে খরচ হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। এই আসল টাকাও উঠবে না। সারাবছর কী খেয়ে বাঁচব সেই চিন্তায় আছি। পানিতে তলিয়ে গেছে, তারপরও তুলতেছি। দেখি কিছু হয় নাকি। তা না হলে এই বাদাম গরু-ছাগলকে খাওয়াতে হবে।
কৃষক জুলমত শেখ ও আলী আকবর বলেন, প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বাদাম, ধান ও তিল আবাদ করেছিলাম। আর মাত্র কয়েকদিন থাকলে ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু পদ্মায় হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় সর্বনাশ হয়ে গেল। কীভাবে এই ক্ষতি পোষাব? আমাদের মতো অনেক চাষির প্রায় শতাধিক একর ফসলি জমির ফসল পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে গেছে।
সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু বলেন, প্রতিদিন বেড়েই চলেছে পদ্মার পানি। আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকাই চরাঞ্চল বেষ্টিত। এখানে বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষ বাদাম, ধান ও তিল চাষ করেন। পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চলের প্রায় শতাধিক একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাচুড়িয়া, চরপাচুড়িয়া, নারানদিয়া, চর নারানদিয়াসহ নদীর তীরের বাদাম ক্ষেত, ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী বলেন, এবছর জেলায় ৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে। এছাড়া ৫ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে তিল ও ২২ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চরাঞ্চলে বাদাম ও তিল আবাদের পরিমাণ বেশি হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা বেশ ভালো ছিল। নদীতে অসময়ে পানি বাড়ায় চাষিদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, পদ্মায় এই সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে পানি বেড়েছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে দুই মিটার পানি বেড়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
এমএমজেড