ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকার সঙ্গে গতি পাবে ২১ জেলার চাকা

মো. রোমান আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
ঢাকার সঙ্গে গতি পাবে ২১ জেলার চাকা

শরীয়তপুর: আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির উদ্বোধন করবেন।

উদ্বোধনের পর সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের দ্বার উন্মোচন হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে দেশের ২১টি জেলায় যাওয়া যায়। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে বরিশাল যাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টায়, খুলনা ৩ ঘণ্টা আর ফরিদপুর যেতে সময় লাগবে ৪৫-৫০ মিনিট। তাই সড়ক পথকে ঘিরে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে সাধারণ মানুষসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।  

জাজিরা মাঝিরঘাট থেকে ফেরি ও জোয়ার-ভাটা ভেদে মাওয়া প্রান্তে যেতে কখনও একঘণ্টা, আবার কখনও দেড়ঘণ্টা লাগছে। তেমনি সরাসরি বরিশাল থেকে ঢাকা যেতে (ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার) সময় লাগবে মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। কারণ ৬ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে মাত্র ১০-১২ মিনিটেই পৌঁছানো যাবে মাওয়াপ্রান্তে। এরপর ৪০ মিনিটেই সময়ের মধ্যে গুলিস্তান কিংবা যাত্রাবাড়ী পৌঁছে যাওয়া যায়। তেমনি খুলনা, যশোর থেকেই চার, সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীতে পৌঁছানো যাবে।

দক্ষিণাঞ্চলের এমন অনেক পরিবহন মালিক রয়েছেন যারা শুধু মাওয়া ও দৌলতদিয়ার ফেরির কারণে বিলাসবহুল গাড়ি নামাতে পারেনি। এছাড়াও এক্সপ্রেসওয়ে অর্থাৎ ভাঙ্গা গোলচত্বর থেকে কাঁঠালাবাড়ী ফেরিঘাটের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার, যা বর্তমানে যেতে সময় লাগছে মাত্র ২০ মিনিট। আর এতো অল্প সময়ে ঢাকায় যাওয়া-আসা করা সম্ভব হবে স্বপ্নের এই সেতুর কারণে। পদ্মা সেতু চালু হলে সড়ক পথের যোগাযোগে ফেরি ভোগান্তি থাকবে না। ফলে পদ্মা সেতু হলে পরিবহন ব্যবসায় নতুনত্ব আসবে দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে। এদিকে, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নয়নমূলক মহাকর্মযজ্ঞ চলছে শরীয়তপুর সহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে।

বরিশাল থেকে মাওয়া রুটে চলাচলকারী কয়েকজন বাস চালক ও মালিক বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে খুলনা, যশোর, বেনাপোল, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলা থেকে ঢাকায় যেতে সময় কমে যাবে প্রায় দেড় থেকে ২ ঘণ্টা। আর যাত্রীসেবার মানও বাড়বে কয়েকগুন। এতোদিন মাওয়া ফেরি ও সরু সড়কপথের কারণে এ অঞ্চলে বিলাসবহুল পরিবহন সংযোজন যারা এতোদিন করতে পারেননি, এখন বিনিয়োগ করবো। কারণ, বিনিয়োগ করলে ক্ষতি সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা মোটেই নেই।

বেনাপোল ও খুলনা থেকে ছেড়ে আসা দুইটি বাসের চালক নুরুজ্জামান ও মনির বলেন, আমার ফেরিঘাটে এসে দীর্ঘ সময় বসে থাকা লাগতো। ফেরিঘাটে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারবো।

কুয়াকাটা থেকে কয়েকজন ছাত্র বলেন, ঢাকা সমুদ্র সৈকত দেখতে ১২-১৩ ঘণ্টা ব্যয় করে কষ্ট হলেও এখন মানুষ কক্সবাজার যাচ্ছে। কিন্তু পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে ঢাকা থেকে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৫-৬ ঘণ্টা। কক্সবাজারের থেকে অর্ধেকেরও কম সময় লাগবে কুয়াকাটায় আসতে। আবার বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির ভাসমান বাজার কিংবা শাপলার বিল দেখতে ঢাকা থেকে আসতে তেমন একটা সময়ের প্রয়োজন হবে না।

শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে আমরা আনন্দিত। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা যাওয়ার স্বপ্ন শরীয়তপুরবাসীর বহুদিনের। শরীয়তপুরবাসীর স্বপ্ন পূরণে আমরা শরীয়তপুর টু ঢাকা ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামে বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে আমরা এসি বাস সার্ভিসও চালু করবো। শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ফোর লেনের সড়ক নির্মাণের কথা রয়েছে। আমরা অতি দ্রুত সড়কটি নির্মাণের দাবি জানাই। কারণ বর্তমানে যে সড়কটি রয়েছে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ, ভাঙাচোরা। দুটি গাড়ি পাস হতে কষ্ট হয়। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আশাকরি সরকার দ্রুত সড়কটি ফোর লেনে রুপান্তরিত করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।