ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ঠিকাদারকে একাধিক চু‌রির মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
ঠিকাদারকে একাধিক চু‌রির মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

বরিশাল: প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদারের বিরুদ্ধে একের পর এক চুরির মামলা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ.জ.মো. মাসুদুজ্জামান মিলুর বিরুদ্ধে।  

শনিবার (২৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় শহীদ আব্দুর রব সের‌নিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন হয়রানির শিকার ঠিকাদার ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল।

তিনি পিরোজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম শিকারপুর মেসার্স সরদার ইলেকট্রনিকের স্বত্তাধিকারী।

ওসি তাঁর ব্যবসায়ীক প্র‌তিষ্ঠান থেকে দাবিকৃত মাসোহারা না পেয়ে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করে‌ছেন ভুক্ত‌ভোগী।  

লিখিত বক্তব্যে ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল বলেন, আমার চাচা এনায়েত হোসেন সরদারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল। এনায়েত হোসেন সরদার আমাকে ঘায়েল করতে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বাসার কেয়ারটেকার দিয়ে থানায় ১৮ হাজার ৫০০ টাকা চুরির অভিযোগ দায়ের করান। ওসি সেই অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত না করে সরাসরি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেন। এছাড়া সেই একই বাদী ১১ মে মিটার চুরির অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগও তদন্ত ছাড়া মামলা হিসেবে গ্রহণ করে আমাকে গ্রেফতার করেন ওসি মাসুদুজ্জামান মিলু। গ্রেফতারের ছবি তুলে স্বপ্রনোদিত হয়ে ওসি বিভিন্নজনকে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করান।  

ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল বলেন, আমি পিরোজপুরের প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। আমার মা, ভাই ও বোন ইউরোপে বসবাস করেন। অথচ আমার বিরুদ্ধে একই বাদী দিয়ে অভিযোগ আনা হয়েছে আমি সামান্য সাড়ে ১৮ হাজার ৫ শত টাকা চুরি করেছি। শুধু সেখানেই শেষ নয়, আমার নিজের ঘরের মিটার চুরি আমি নিজে করেছি- এমন মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাভোগও করতে হয়েছে।  

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ওসি আ.জ. মো. মাসুদুজ্জামান মিলু পিরোজপুর সদর থানায় যোগ দেওয়ার পরে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে আমাকে খবর পাঠাতেন এবং ডেকে মাসোহারা দাবি করতেন। আমি দিতে অস্বীকার করায় তিনি বলেছিলেন, আমাকে এমন ক্ষতি করবেন যেন কারো কাছে মুখ দেখাতে না পারি। আমি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হলেও আমার বিরুদ্ধে একের পর এক চুরির মামলা তদন্ত ছাড়া গ্রহণ করে তার মনে জমে থাকা ক্ষোভের প্রতিশোধ নিচ্ছেন।  

ওয়াহিদ রাসেল দাবি করেন, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। পক্ষান্তরে ওসি মাসুদুজ্জামান মিলুর পরিবার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। পাশাপা‌শি তার চাচাও ছাত্রদ‌লের সা‌বেক নেতা। আর ওসির আপন ছোট ভাই বরগুনা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদুজ্জামান টিপন। তিনি ওসি হলেও আওয়ামী লীগের নেতাদের সহ্য করতে পারেন না। তিনি এর আগে বাউফল, বাকেরগঞ্জ ও নলছিটি থানা থেকে অপকর্মের দায়ে ক্লোজড হন।  

রাসেল বলেন, দাবি অনুসারে মাসোহারা না দেওয়ায় ওসি মাসুদুজ্জামান মিলু আমার পারিবারিক বিরোধকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে আমাদের পরিবারকে উৎখাতের চক্রান্ত করছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির হস্তক্ষেপ কামনা করেন ঠিকাদার রাসেল। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান তিনি।  

এ বিষ‌য়ে ভুক্ত‌ভোগী রা‌সে‌লের চাচা এনা‌য়েত হো‌সেনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পি‌রোজপুর সদর থানার ওসি আ. জ. মো মাসুদুজ্জামান মিলু দাবি করেন, জমি বিরোধের জের ধরে তার চাচার সঙ্গে বিরোধ আছে। চাচা মামলা দায়ের করলে আমার কিছুই করার নেই। আর আমি এ থানায় যোগদা‌নের আগেই বি‌ভিন্ন ধারায় রা‌সে‌লের বিরু‌দ্ধে চার‌টি মামলা ছি‌লে। ২০১০ সা‌লের এক‌টি মামলা, ২০১২ সা‌লের দুইটি মামলা ও ২০১৭ সা‌লের এক‌টি মামলা আদাল‌তে বিচারাধীন এবং চল‌তি বছ‌রের ২ ফেব্রুয়া‌রি দা‌য়ের করা মামলা‌টির অভিযোগপত্র ২১ ফেব্রুয়া‌রি আদাল‌তে দা‌খিল করা হ‌য়ে‌ছে।

ঘুষ বা আ‌র্থিক লেন‌দের বিষ‌য়ে তোলা অভিযোগ ভি‌ত্তিহীন ব‌লে দা‌বি ক‌রে ওসি ব‌লেন, ঘটনা এবং ঘটনাস্থল আলাদা হলে এবং নতুন ক‌রে অভিযোগ দি‌লে তা তদন্ত ক‌রেই নতুন মামলা হি‌সে‌বে নেওয়া হয়, আর এটা নিতে আমি বাধ্য।  


বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
এমএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।