ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জলাবদ্ধতায় পাবনার বিসিকের দশা বেহাল

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
জলাবদ্ধতায় পাবনার বিসিকের দশা বেহাল

পাবনা: পাবনার পৌর এলাকার শেষ প্রান্তে ছাতিয়ানি অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প নগরী অঞ্চল বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। জলাবদ্ধতার কারণে এ শিল্প নগরীর অবস্থা এখন বেহাল।

শিল্প এলাকায় ঢোকার তিন প্রবেশমুখের দুটির অবস্থা খুবই শোচনীয়। বছরের বেশিরভাগ সময় এ দুই প্রবেশ মুখ পতিত থাকে জলাবদ্ধতায়। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টির হলেই ড্রেন উপচে পানি ঢোকে শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দীর্ঘ সময় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেও এ ব্যাপারে প্রতিকার মেলেনি।

স্বাধীনতার অর্ধশত বছর আগে সরকারিভাবে শিল্প নগর হিসেবে যাত্রা শুরু হয় পাবনা বিসিকের। দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন সাধনে এক স্থানেই নানা প্রতিষ্ঠানকে জায়গা দেওয়া হয় এখানে। সরকারি তত্ত্বাবধানেই দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন সাধনে বিসিক কাজ করে যাচ্ছে। শিল্পের উন্নয়নে কাজ করলেও বিসিক এলাকার দৈন্যদশায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।

অপরিকল্পিত সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বেশিরভাগ সময় জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে শিল্প কলকারখানাগুলো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মালবাহী পরিবহনগুলোকেও পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়। পরিস্থিতি এতটাই করুণ, মালবাহী পরিবহনগুলো সময়মতো পণ্য ডেলিভারি করতে পারছে না। আবার খানা-খন্দের কারণে ক্ষতি হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহনের। মালামাল সরবরাহসহ পণ্য ওঠা-নামায় পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।

দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নগরীর এ বেহাল অবস্থা কাটাতে পাবনা বিসিকের শিল্প কলকারখানাগুলো সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছে।

পাবনা বিসিকে পণ্য নিয়ে আসা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এ নগরীর মতো এমন করুণ অবস্থায় অন্য কোনো এলাকায় নেই। এখানে পণ্য নিয়ে আসলে প্রতিটি যানবাহনের ক্ষতি গুনতে হয়। খাদে পড়ে ট্রাকের ইঞ্জিনের ক্ষতি হচ্ছে। মালামাল লোড-আনলোডেও ব্যাপক সময় নষ্ট হয়।

সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকারি রাজস্ব, ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করলেও যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তা নেই। জলাবদ্ধতার কারণে অন্যান্য সুবিধাও ভোগ করা যায় না। বিভিন্ন সময় এ সমস্ত বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বর্ষা মৌসুমে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে মালামাল নষ্ট হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তা সবই খারাপ।

তারা আরও অভিযোগ করেন, সরু রাস্তা হওয়ায় মূল সড়কে পণ্যবাহী গাড়ি রাখতে হয়। পানি নিরসনের কোনো উদ্যোগ নেই। কর্তৃপক্ষকে আর কীভাবে বললে তারা পদক্ষেপ নেবে, প্রশ্ন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়িক পরিবেশ রক্ষায় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।

শিল্প অঞ্চলে বসবাসরত জনগণের অভিযোগ, বিসিক এলাকার ভেতরে ও বাহিরে যারা বসবাস করছেন তারাও অসহায়-নিরুপায়। ময়লা, কাঁদা-পানি মাড়িয়ে তাদের যাতায়াত করতে হয়। নগরীর অভ্যন্তরে কেউ থাকতে চায় না। শ্রমিকরা খুব কষ্ট করে যাতায়াত করেন। পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ছে। নীরব ঘাতকের মতো চর্মরোগ হচ্ছে কারখানা শ্রমিকদের।

পাবনা বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প নগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কর্ম পরিচালনা করে। সড়কে ড্রেনেজ সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি বিসিকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মাস্টার প্ল্যানও দেওয়া আছে। কিন্তু বাজেট সঙ্কটের কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

তিনি জানান, সম্প্রতি এক নম্বর গেটের কিছু অংশের কাজ করা হয়েছে। আগামীতে বাজেট আসলে সমস্যার সমাধান করা হবে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই বিসিকে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবে।

১৯৬২ সালে ৯০ একর জায়গা নিয়ে স্থাপিত হয় পাবনা বিসিক শিল্প নগরী। পরবর্তীতে আরও ৩৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে বর্তমানে ১২৫ একর বিশাল জায়গা নিয়ে জেলার এই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্য করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

তিনটি প্রবেশ পথে ৪ কিলোমিটার সড়ক ও ৮ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কে কংক্রিটের ঢালাই কাজ হয়েছে। ছোট বড় মিলিয়ে ২০৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বিসিক শিল্প নগরীতে। এর মধ্যে দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপ, এ আর গ্রুপের রাইস মিল, ময়েজ উদ্দিন স্টিল, বনলতা সুইটসসহ বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করে বিসিকে। এ শিল্প নগরীর প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বছরে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।