ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

লাইসেন্স ছাড়াই বাস চালাতেন ঘাতক আল আমিন!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২২
লাইসেন্স ছাড়াই বাস চালাতেন ঘাতক আল আমিন!

ঢাকা: ২০১২ সালে বলাকা বাসের হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন আল আমিন। ৪ বছর হেলপারের কাজে করে ২০১৭ সাল থেকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক হয়ে যান তিনি।

দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা মজুরিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। যদিও চালক হিসেবে আল আমিনের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।

গত ২ জুলাই সকালে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৬৩০) বাসটি নিয়ে রাজধানীর চিটাগং রোড থেকে কামারপাড়ার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন আল আমিন। আগে যাত্রী নেওয়ার তাড়ায় গুলিস্তানে এসে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন তিনি। এতে অপর একটি বাসের সঙ্গে রেষারেষি ও বেপরোয়া প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে পল্টনে এসে তার গাড়ি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। এতে জাহাঙ্গীর মোল্লা নামে এক কৃষককে চাপা দিয়ে বাসটি সড়কের আইল্যান্ডের ওপর উঠে যায়।

গ্রেফতারের পর র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঘাতক বাসচালক আল আমিন।

সোমবার (০৪ জুলাই) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

নিহত মো. জাহাঙ্গীর মোল্লার পরিবারের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে রোববার রাতে মুন্সিগঞ্জ সদর থানা এলাকা থেকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের ঘাতক বাসচালক মো. আল আমিনকে (৩২) গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ১০৫ ধারায় পল্টন মডেল থানায় মামলা করেন। পল্টন মডেল থানাধীন বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে থেকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৬৩০) ঘাতক বাসটি জব্দ করা গেলেও ঘাতক গাড়িচালক পালিয়ে যান। এই ঘটনায় র‌্যাবের আভিযানে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঘাতক বাসচালক মো. আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার আল আমিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে পাঁচ বছর কাজ করেন। ২০১২ সালে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে বলাকা বাসে হেলপারি শুরু করেন। ২০১৭ সাল থেকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক হিসেবে দৈনিক কাজ শুরু করেন। তবে তার কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ড্রাইভিংয়ের ওপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণও নেই। গাড়ির হেলপার হিসেবে চালকের কাছ থেকে তিনি ড্রাইভিং শিখেছেন। ট্রাফিক নিয়মাবলি সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞানও নেই। যাত্রী নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন বলে স্বাকীর করেছেন ঘাতক বাসচালক।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, নিহত কৃষক জাহাঙ্গীর মোল্লার আত্মীয়-স্বজন জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বিদেশ যাত্রার জন্য জাহাঙ্গীর মোল্লা শ্যালকের মেডিক্যাল টেস্ট করানোর জন্য গত ১ জুলাই ঢাকায় আসেন। চকবাজারে তার ভাগিনার বাসায় ওঠেন। ঘটনার দিন ২ জুলাই মেডিক্যাল টেস্ট করানোর জন্য তারা আবদুল্লাহপুর যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকালের দিকে তার শ্যালক, ভাগিনা ও ভায়রাকে নিয়ে গোলাপশাহ মাজার থেকে পায়ে হেঁটে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তার শ্যালক ও ভাগিনা রাস্তা পার হয়ে যান, তার ভায়রা রাস্তার অপর প্রান্তে আইল্যান্ডের ওপরে ছিলেন এবং নিহত জাহাঙ্গীর তখন রাস্তার ওপর ছিলেন। এ সময় মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের দুটি বাস প্রতিযোগিতা করে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে একটি বাস জাহাঙ্গীর মোল্লাকে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডের ওপর উঠে যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালায় তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২২
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।