ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কমানোর পর আবার বাড়ানো হলো পটুয়াখালী-ঢাকার লঞ্চ ভাড়া

মো. জহিরুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২২
কমানোর পর আবার বাড়ানো হলো পটুয়াখালী-ঢাকার লঞ্চ ভাড়া

পটুয়াখালী: পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে ঢাকা-পটুয়াখালী নৌ রুটে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আগের তুলনায় কমে আসছে যাত্রীর সংখ্যা।

ডেকের থেকে বেশি কমছে কেবিনের যাত্রী। এসব কারণে এ রুটে লঞ্চের ভাড়া কমিয়েছিল মালিক পক্ষ।

এদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে দক্ষিণ অঞ্চলে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন বিভিন্ন পরিবহন সেবা চালু করেছে দেশের নামিদামি সব কোম্পানি। মাদারীপুর-ভাঙ্গার পরে চার লেন সড়ক গিয়ে দুই লেনে মিলিত হয়। এছাড়া রাস্তায় মাত্রাতিরিক্ত অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যানসহ অন্যান্য বাহন চলায় এদিকে সড়ক পথকে কিছুটা অনিরাপদ মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

অন্যদিকে এসব বাসে পরিবার নিয়ে যাত্রায় বয়স্ক ও শিশুদের জন্য টিকিট কেটে সিট নিয়ে আসতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের যাতায়াত খরচ হয় অনেক। তাই পারিবারিক যাত্রায় এখনও লঞ্চযাত্রাকে প্রথম পছন্দে রেখেছেন এ অঞ্চলের মানুষ। সে অনুযায়ী ঈদ উপলক্ষে এবার দক্ষিণ অঞ্চলের লঞ্চের ঈদযাত্রায় যে আধিপত্য, তা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

এসবের মধ্যে হঠাৎ করেই গত সোমবার (৪ জুলাই) থেকে ফের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। পটুয়াখালী থেকে ঢাকা রুটে যে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, ঢাকা থেকে আসতে নেওয়া হচ্ছে তার দ্বিগুণ। ফলে হঠাৎ করে ঢাকা থেকে ভাড়া বৃদ্ধি করায় পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটের সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ।

মঙ্গলবার (৫ জুন) পটুয়াখালী লঞ্চ টার্মিনাল থেকে জানা যায়, পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটে দৈনিক রোটেশন পদ্ধতিতে মোট ১০টি লঞ্চ চলাচল করে। আগে দৈনিক তিন/চারটি লঞ্চ চলাচল করলেও পদ্মা সেতু চালুর তিন দিন পরেই হঠাৎ করে দুটি লঞ্চ কমিয়ে দেওয়া হয় এ রুটে।
এ রুটের লঞ্চগুলো হচ্ছে এমভি সুন্দরবন-১৪, এমভি সুন্দরবন-৯, এমভি এ আর খান-১, এমভি কুয়াকাটা-১, এমভি কাজল-৭, এমভি প্রিন্স আওলাদ-৭, এমভি জামাল-৫, এমভি কামাল খান-১, এমভি পুবালী-১২ ও এমভি সত্তার খান।

সেতু উদ্বোধনের পরে যাত্রীদের টানতে পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটের গত সপ্তাহে ভাড়া কমিয়ে দেয় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। আগে প্রথম শ্রেণির ডাবল কেবিন ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২ হাজার ২০০ টাকা করা হয় এবং সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়।

কিন্তু সোমবার (৪ জুন) ঢাকা থেকে পটুয়াখালী আসতে প্রথম শ্রেণির ডবল কেবিন ২ হাজার ৪০০/৫০০ টাকা এবং সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৩০০/৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ডেকের যাত্রীদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

সাধারণ মানুষের জন্য ডেকের ভাড়া ২০০ টাকা হওয়ায় অনেকেই লঞ্চে আসা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছিলেন। ডেকের ভাড়া কমিয়ে, আবার ১৫ দিনের মাথায় ফের বৃদ্ধি করায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

ঢাকা থেকে পটুয়াখালীগামী যাত্রী সোলাইমান গাজী বলেন, যাওয়ার সময় ২০০ টাকা বলে ডেকে ডেকে আমাদের তোলে। কিন্তু আসার সময় আমাদের ৪০০ টাকায় আসতে হয়েছে। তারপরও লঞ্চে চার/পাঁচজনের পরিবার নিয়ে এলে বড়দের ভাড়া দিতে হলেও একদম ছোটদের ভাড়া লাগছে না। বাসে এলে তো সবার ভাড়া দিতে হতো। বাসে আসার থেকে কম খরচে আসতে পারছি।

লঞ্চের আরেক যাত্রী শাহিন মৃধা বলেন, একটু আরামের জন্য লঞ্চে চলাচল করি, কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যদি এ সুযোগে অসৎ ব্যবহার করে, তাহলে লঞ্চে যাতায়াত করা বন্ধ করতে হবে‌। পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে আসব ৭০০ টাকায়, লঞ্চে ১৪শ’/১৫শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে আসার প্রশ্নই আসে না। এটা তো মগের মুল্লুক না। সিঙ্গেল কেবিন হাজার টাকার ওপরে হলে লঞ্চে আর আমাদের মতো সিঙ্গেল যাত্রী আসবে না।

এমভি কাজল-৭ এর মাস্টার বলেন, আমাদের এখন কিছুটা যাত্রী কম, তবে পটুয়াখালী থেকে ভাড়াও কম। ঢাকা থেকে আসার সময় যাত্রী বেশি হয়। এসময় একটু বেশি না নিলে পথ খরচ দিয়ে লস হয়।  

তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে সিঙ্গেল কেবিন ১৩শ’/১৪শ’ আর ডাবল কেবিন ২ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

পটুয়াখালী নদী বন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. মামুন অর রশিদ বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ রুটে যেসব লঞ্চ সার্ভিস আছে, তাতেই তো যাত্রীর চাপ নেই। লঞ্চে চাপ হলে তখন পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটে সরকারি ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। সরকারের নির্ধারিত এ ভাড়ার মধ্যে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বাড়াতেও পারেন এবং কমাতেও পারেন। তবে এর থেকে বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।