ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ৪০ কি.মি. যানজট

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২২
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ৪০ কি.মি. যানজট যানজট।

টাঙ্গাইল: ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানজট আরও তীব্র হয়েছে। ভোর থেকে শুরু হওয়া যানজট ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে।

 

শুক্রবার (৮ জুলাই) বিকেলে সেতুর পূর্বপ্রান্ত থেকে বাসাইল উপজেলার বাঐখোলা পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজারো মানুষ।

পুলিশ সূত্র জানায়, সকালে সেতুর পশ্চিম প্রান্তে বাস ও পিকআপভ্যানের সংঘর্ষের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এ দুর্ঘটনার কারণে ভোরে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট সেতুতে টোল আদায়ও বন্ধ থাকে। ফলে সকালে যানজট সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার কালিহাতীর এলেঙ্গা ছাড়িয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহনের চাপ বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে যানজটও দীর্ঘ হতে থাকে। বিকেল নাগাদ দীর্ঘ এই যানজট বাসাইল উপজেলার বাঐখোলা পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।  

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন মহাসড়কের মির্জাপুরের পাকুল্যা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, ঈদে ঘরমুখো হাজারো মানুষ যে যেভাবে পারছেন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। তবে যাত্রীবাহী বাসের চেয়ে ট্রাক ও পিকআপভ্যানে করেই বেশি মানুষ গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। এতে করে সকাল থেকেই প্রচণ্ড রোদ আর দুপুরের পর বৃষ্টি এবং তীব্র যানজটের কারণে ট্রাকে থাকা ঘরমুখো মানুষকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।  
এবার মহাসড়কটিতে খুবই অল্প সংখ্যক মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে।

এদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নারীদের। প্রাকৃতিক ডাকে সারা দিতে তারা মহাসড়কে পাশে থাকা বাড়িগুলোতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।  

তারা জানান, গত ঈদে মহাসড়কের পাশে নির্মাণ করা বলিক টয়লেট থাকলেও সেখানে পানির ব্যবস্থা না থাকায় সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে যেতে হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সেতুর ওপর দিয়ে উত্তরবঙ্গগামী ২৫ হাজার ১১৩টি যানবাহন পার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৭৩ লাখ ৮৯ হাজার ৯০০ টাকা।  

অপরদিকে ঢাকাগামী ১৮ হাজার ৪৮২টি যানবাহন পার হয়েছে। টোল আদায় হয় এক কোটি ৬০ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ টাকা।

টোলপ্লাজা সূত্র জানায়, স্বাভাবিক অবস্থায় সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১২/১৩ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। প্রতি বছর দুই ঈদের সময় যানবাহন পারাপারের সংখ্যা কয়েক গুন বেড়ে যায়। তবে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাঙ্ঘা থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার খুব কম সংখ্যক মোটর সাইকেল সেতু পারাপার হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৩৪১টি মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে। যা গত বছর ছিল প্রায় ১৮ হাজার।
ঢাকা থেকে গাইবান্ধাগামী বাসের যাত্রী আশেকুর রহমান জানান, গাবতলী থেকে সকালে রওনা হয়ে আট ঘণ্টারও বেশি সময়ে টাঙ্গাইল শহর বাইপাস পর্যন্ত পৌঁছেছেন। বিকেল ৩টায় তিনি সেখানে যানজটে আটকে ছিলেন এক ঘণ্টা ধরে। রাজশাহীর যাত্রী জাকির মোস্তফা জানান, গত রোজার ঈদে যানজট তেমন ছিল না। মনে করেছিলেন এবারও যানজট হবে না। তাই রওনা হয়েছিলেন। তিনি জানান, প্রতিবছর যানজটের কারণে ঈদের আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়।  

দুপুর ১২টায় মহাসড়কের পৌলি এলাকায় কথা হয় কুড়িগ্রামগামী অজয় দত্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোর ৫টায় বাইপাইল থেকে গাড়িতে উঠেছি। দুপুর পর্যন্ত টাঙ্গাইলের পৌলি পর্যন্ত এসেছি। খাবারও খেতে পারছি না। কোথায় পানিও পাচ্ছি না। গরমসহ সব মিলিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ট্রাকচালক কাদের মোল্লা বলেন, আশুলিয়া থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে কখনও টানা ৩০ মিনিট গাড়ি টানতে পারিনি। সড়কের দিকে তাকালে শুধু গাড়ি আর মানুষ। পা ফেলার মতো জায়গা নেই। বগুড়াগামী রাশেদা বেগম নামে এক গৃহবধূ বলেন, আমরা গরম সহ্য করতে পারলেও আমার তিন বছরের ছেলেটি গরম সহ্য করতে পারছে না। সব মিলিয়ে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে।

পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, যানজট নিরসনে মহাসড়কে সাত শতাধিক পুলিশ কাজ করছে। বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপরে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে মহাসড়কের যানজট শুরু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।