ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মিথ্যা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করতে গিয়ে ফাঁসলেন ব্যবসায়ী নিজেই!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২২
মিথ্যা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করতে গিয়ে ফাঁসলেন ব্যবসায়ী নিজেই!

চট্টগ্রাম : মূলত আর্থিক বিরোধকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘটিত মারামারির ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই ২৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন এক ব্যবসায়ী। কিন্তু বিধিবাম! পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তদন্তে আসল ঘটনা বের হয়ে এলে অভিযোগ প্রত্যাহারের পাশাপাশি অধোবদনে ক্ষমাপ্রার্থনা চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলাধীন জাপতনগর এলাকার বাসিন্দা শফিউল আলম নামের এই গরু ব্যবসায়ীর।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৮ জুলাই) রাত ১০ টার দিকে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিওতে গরু ব্যবসায়ী শফিউলকে বুক চাপড়ে নিজের ২৮ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানাতে দেখা যায়। সেখানে তিনি বলেন, তার ২৩ টি গরু বিক্রির মোট ২৮ লক্ষ টাকাসহ তিনি রাউজান উপজেলাধীন (ফটিকছড়ি থানার সীমান্তবর্তী) নওয়াজিসপুর ইউনিয়নের তৌকির হাটস্থ তার অংশীদারি মালিকানাধীন গরুর খামারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স দরবার এন্টারপ্রাইজে অবস্থান করছিলেন। রাত আনুমানিক ৮  টায় ৭ থেকে ৮ জন ব্যক্তি অতর্কিতে সেখানে ঢুকে তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে এবং অস্ত্র প্রদর্শন করে সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।   এ সময় তাকে বেদম মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী  শফিউলের। ভিডিওটি মুহূর্তেই স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ফটিকছড়ি থানায় উপস্থিত হয়েও একই অভিযোগ করেন তিনি।

ঈদের আগের দিন এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠায় নড়েচড়ে বসেন পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম, রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন এবং ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ ইবনে আনোয়ার। তদন্ত প্রক্রিয়ার এক পর্যায়ে পুলিশের নিকট ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হলে অভিযোগকারী শফিউলসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে তারা। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে ছিনতাইয়ের অভিযোগের অসত্যতা স্বীকার করে নিয়ে পুলিশের নিকট ক্ষমা চান শফিউল।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযোগকারী সফিউলের সঙ্গে তার নিজ এলাকার বাসিন্দা মো. মনি (৪৫), বাবর মিয়া (৩২)সহ বেশ কয়েকজনের আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধ চলমান রয়েছে। বিষয়টি মীমাংসার লক্ষ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও উভয় পক্ষের অনড় মনোভাবের কারণে তা ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে গত বেশ কিছুদিন যাবত উভয়পক্ষের মধ্যে  উত্তেজনা বিরাজ করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে ছিনতাইয়ের এই অভিযোগ করা হয়ে থাকতে পারে বলে অভিমত স্থানীয়দের।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফটিকছড়ির ১৭ নম্বর জাপতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন জিয়া বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ তারা তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে সত্য উদঘাটিত করেছেন। অন্যথায় এই অভিযোগের কারণে অনেক নিরীহ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হত। ভবিষ্যতেও পুলিশ এভাবেই জনকল্যাণে ভূমিকা রাখবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এ জনপ্রতিনিধি।  

এ প্রসঙ্গে সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বাংলানিউজকে জানান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক পিপিএম স্যারের নির্দেশে আমরা অভিযোগটি অনুপুঙ্খ তদন্ত করছি। এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ২৮ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগটির সত্যতা মেলেনি বলেও নিশ্চিত করেন এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২২
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।