ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লাঞ্ছনা: অবশেষে খুলেছে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ, আসেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২২
লাঞ্ছনা: অবশেষে খুলেছে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ, আসেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
 

নড়াইল: অবশেষে দীর্ঘ এক মাস পাঁচদিন পর রোববার (২৪ জুলাই) খুলেছে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ। তবে লাঞ্ছনার শিকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজে আসেননি।


 
রোববার নড়াইলের অতিঃজেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার সজল বিশ্বাস ও সহকারী পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেন কলেজে এসে শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে ঈদের পরে কয়েক দফা কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও সম্প্রতি দিঘলিয়ার সহিংসতার পরে তা পিছিয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
 
সোমবার (২৫ জুলাই) থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদান শুরুর মাধ্যমে কলেজ চালু হয়েছে। ধাপে ধাপে সব ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে বলে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
সদরের মির্জাপুর কলেজে রাহুল দেব নামের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের নুপুর দেবকে সমর্থন করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এ পোস্ট দেওয়ার পর ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও পোস্ট মোছেননি রাহুল। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ছোড়ে। এ ঘটনার সময় দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এসময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সামনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে কলেজ থেকে বের করা হয়।
 
ঘটনার পরদিন থেকেই কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সেখানে পুলিশের পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। ১৭০/১৮০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। অভিযুক্ত নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত খুলনা বি এল কলেজের এক ছাত্রের ছাত্রত্ব বাতিল করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। এদিকে অভিযুক্ত রাহুলের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। তার বাড়িতে ও অধ্যক্ষ স্বপন কুমারের বাড়িতে পুলিশের সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।
 
ঘটনার পর থেকেই নিজেকে আত্মগোপনে রেখেছেন অধ্যক্ষ স্বপন কুমার। রোববার থেকে কলেজের প্রশাসনিক কর্য্যক্রম ও সোমবার (২৫ জুলাই) শুরু হলেও তিনি উপস্থিত হননি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
 
ওই ঘটনার পর থেকে তিনি বাড়ি আর আসেননি জানিয়ে তার মা বনলতা বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলেকে যেভাবে অপমান-অপদস্থ করা হয়েছে, তাতে সবাই লজ্জিত। আমার ছেলে কলেজে গেলে সম্মানে বরণ করে নিলেই সে কলেজে যোগদান করবে।
 
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, ১৩ জুলাই পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রথমে ১৭ জুলাই কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু লোহাগড়ার দিঘলিয়া এলাকায় আবার অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাওয়ায় দুই দফা পিছিয়ে ২৪ জুলাই কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছুটিতে রয়েছেন। আশা করি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি যোগদান করবেন। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা স্বপন কুমার বিশ্বাসকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত রয়েছে।
 
নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কলেজ পরিচালনা পর্ষদ ও সংশ্লিষ্ট সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার (২৪ জুলাই) থেকে কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খুব দ্রুত এ কলেজের সব বিভাগের একাডেমি ও দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হবে। তবে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার হয়তো দুই-একদিন পরে কলেজে আসবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।