ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বিএমডিসি সনদ নেই, কন্ট্রাক্টে চিকিৎসা করেন নজরুল!

সাগর ফরাজী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
বিএমডিসি সনদ নেই, কন্ট্রাক্টে চিকিৎসা করেন নজরুল! নজরুল ইসলাম

সাভার, (ঢাকা): নাম- নজরুল ইসলাম, পেশা- চিকিৎসা, প্রতিষ্ঠান- আমেনা পাইলস কেয়ার,  ঠিকানা- সাভার থানা রোড। এই নাম ও ঠিকানার মিনি মালিক তিনি একজন কন্ট্রাক্ট চিকিৎসক; যার নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা।

শুধু ডিপ্লোমা কোর্স করে নামের আগে ‘ডাক্তার’ শব্দটি বসিয়ে দিয়েছেন।

সাভার থানা রোডের একটি ভবনের তিন তলায় আমেনা পাইলস কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন নজরুল। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সনদ না থাকলেও তিনি ডাক্তার। করেছেন অসংখ্য চিকিৎসা।

নজরুলের বিরুদ্ধে কন্ট্রাক্টে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার অভিযোগও আছে। রয়েছে ভুল চিকিৎসা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। এই তো সম্প্রতি সাভারের বাসিন্দা শম্ভু ঘোষের সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা কন্ট্রাক্ট করেন তার পাইলস চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসাও করেন। কিন্তু ভুক্তভোগীর রোগ তো ভালো হয়নি। বরং রোগের মাত্রা বেড়ে গেছে।

নজরুল প্রতারণা করেন সাভারের অলিতে গলিতে ছোট ছোট ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে। এসব ব্যানার-ফেস্টুনে লেখা থাকে ডা. নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট পাইলস চিকিৎসক। অথচ যে ভবনে তিনি চিকিৎসা সেবা খুলেছেন; সেখানে নেই কোনো ব্যানার। তবে, এখন পর্যন্ত কত চিকিৎসা করেছে, সেটি কাগজে-কলমে হিসেব করে রেখেছেন নজরুল।

কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে নজরুলের চেম্বারে গিয়ে দেখা যায় তিনি রোগী দেখছেন। রোগ ভেড়ে তাদের ব্যবস্থাপত্রও দিচ্ছেন। প্রেসক্রিপশন দিতে তিনি যে সিল ব্যবহার করেন, সেটিতে লেখা ডা. নজরুল ইসলাম, ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি, এক্সপেরিয়েন্স পাইলস ফিজিশিয়ান। চেম্বারে তার স্বাক্ষরিত কিছু প্রেসক্রিপশনও দেখা গেছে।

শম্ভু ঘোষের ভাগিনা শাউন শাহর সঙ্গে নজরুলের চিকিৎসা সম্পর্কে কথা হয়। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার খালুর পায়ুপথে গুটি টাইপের একটা কিছু হয়। সেটির চিকিৎসার জন্য আমেনা পাইলস কেয়ারের পোস্টার দেখে যোগাযোগ করি। ডাক্তার নজরুল আমাদের সঙ্গে কথা বলে ৩০ হাজার টাকায় সার্জারির কন্ট্রাক্ট করেন। গত ঈদের আগে খালুর চিকিৎসা হয়। সে সময় নজরুল জানান, তার চিকিৎসায় যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তারা যতবার আসবেন, ততবার ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হবে।

শাউন জানান, চিকিৎসা নেওয়ার পরও খালুর সমস্যা বাড়তে থাকে। পরে অপর একজন পাইলস বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে তিনি নজরুলের দেওয়া চিকিৎসাপত্র দেখে তাজ্জব বনে যান। এরপরই তার প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে।

ভুক্তভোগীদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে রোববার (২৮ আগস্ট) বিকেলে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদাকে জানানো হয়। তখন তিনি বাংলানিউজকে জানান, আমেনা পাইলস কেয়ারের বিষয়ে তদন্ত করে কোনো অসংগতি পেলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

পরে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় আমেনা পাইল কেয়ারের ‘চিকিৎসক’ নজরুলের সঙ্গে। বাংলানিউজকে নিজের বিএমডিসি সনদ না থাকার কথা স্বীকার করেন নজরুল। ব্যানার-ফেস্টুনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লেখার কারণ কী জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি ডাক্তারের সহকারী। আমরা এখানে ডাক্তার বসেন। আমি ডাক্তার না। তবে আমার ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট আছে।

ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট কি রোগী দেখার অনুমতি দেয় কিনা, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি নজরুল। কিন্তু দাবি করেন, এ রকম বাংলাদেশে অহরহ রয়েছে। তিনি নিজে যে প্রেসক্রিপশনগুলো দেন সেগুলোয় তার নাম নেই বলেও দাবি তার। কিন্তু তার সই করা চিকিৎসাপত্র দেখালে নজরুল বলেন, আমি আসলে ড্রেসিংগুলো করি। আমি ডিপ্লোমা কোর্স করেছি রোগী দেখে অপারেশন দ্বারা চিকিৎসা দেই।

এদিকে, রোববার নজরুলের প্রতারণার ব্যাপারে জানালে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেন ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা। অভিযোগ আমলে নিয়ে নজরুলের পাইলস কেয়ার সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করেন তিনি। দুপুর ১২টার এ অভিযানে নজরুলের চেম্বার সিলগালা করে দেন তিনি। এ সময় পুলিশ প্রশাসনসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযানের পর বিষয়টি নিয়ে ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্যের ভিত্তিতে আজ এই কেয়ারে আমরা আসি। এখানে নামের আগে ডাক্তার যে লিখছেন তিনি চিকিৎসক নন। এছাড়া পাইলস কেয়ারটির বৈধ কাগজপত্রও নেই। তারা আমাদের দেখাতে পারেনি। তাই প্রতিষ্ঠানটি আমরা সিলগালা করে দিয়েছি। নজরুলের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
এসএফ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।