ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জেলেদের চাল আত্মসাৎ করেছেন রাঙ্গাবালীর ইউপি চেয়ারম্যান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
জেলেদের চাল আত্মসাৎ করেছেন রাঙ্গাবালীর ইউপি চেয়ারম্যান

পটুয়াখালী: সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত মানবিক সহায়তার চাল আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুনের বিরুদ্ধে। সেটি প্রমাণিত হয়েছে।

এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি মামুনের চাল আত্মসাতের ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।

জানা গেছে, মামুনের ভিজিএফ’র চাল আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত করে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসনের গঠিত অভ্যন্তরীণ কমিটি। কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশফাকুর রহমান পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।

তদন্ত প্রতিবেদনে রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদের মৎস্য ভিজিএফ তালিকার যাচাই-বাছাই এবং পর্যালোচনা করে ১৯ জন মৃত ব্যক্তির নাম জেলেদের ভিজিএফ’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ভিজিএফ’র তালিকায় থাকা ৭৮ জনের কোনো নাম পরিচয় কিংবা অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ ২০১৯-২০২০; ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে এবং ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে জেলেদের চাল বিতরণের মাস্টারোলে কোনো কোনো ব্যক্তির নামে বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলন দেখানো হয়েছে। এছাড়া তদন্তকালে অভিযুক্ত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দাবী করেন ভিজিএফ’র তালিকায় ৫১ জনের নাম দুবার রয়েছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও কমিটির আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ তালুকদার তাকেসহ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন ইউএনও। সদস্য করা হয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও আইসিটি সহকারী প্রোগ্রামারকে। তিনি বলেন, আমাদের কমিটি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার তালিকা সংগ্রহ করে, তালিকার সাথে মিলিয়ে যাচাই বাছাই করি। যেসব বিষয় সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে সেসব বিষয় উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছি।

এ বিষয়ে রাঙ্গাবালীর ইউএনও মাশফাকুর রহমান বলেন, দুদকের দায়ের করা একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরীণ একটি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করিয়েছি। তদন্তে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ বিষয়ে গত ১লা সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহম্মদ কামাল হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ পরে জানানো হবে।

অভিযুক্ত রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুনের কাছে ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি মোবাইলে কথা বলবেন না বলে জানান। এ ব্যাপারে প্রতিবেদন না করতেও অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে এক মাসের বেশি সময় নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের তদন্ত করা ও গত ২৮ দিনেও জেলা প্রশাসন কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অভিযোগকারী জেলেদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় আদৌ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, সেটি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ