চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে পূর্ব শত্রুতার জেরে গত মঙ্গলবার সকালে পুড়িয়ে দেওয়া হয় শিবগঞ্জের যুবক মাসুদ রানার আম ও পেয়ারার বাগান।
গাছগুলোতে থোকায় থোকায় ধরে থাকা বিভিন্ন জাতের দেড় শতাধিক আম ও পেয়ারা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এ অবস্থা শুধু মাসুদ রানার একার নয়। এর আগেও গত ১৮ এপ্রিল একই উপজেলার শিংরইলে আরও একটি আম বাগান পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এতে করে এ এলাকায় যেসব উদ্যোক্তা দীর্ঘ মেয়াদে লিজ নিয়ে আম বাগান বা সমন্বিত কৃষি খামার করেছেন তারা সবাই আতঙ্কে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী মাসুদ রানা জানান, শিবগঞ্জ থেকে নাচোল উপজেলায় এসে ৫০ বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে বিভিন্ন জাতের আম ও ফল গাছ রোপণ করেন। তিনি বছর কঠোর পরিশ্রম ও দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগের পর এ বছর গাছগুলোতে ফলের দেখা পান। আশায় বুক বাঁধতে থাকেন এবার হয়ত কিছু টাকা আসবে। এবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ফলন খুবই খারাপ হলেও তার বাগানে পর্যাপ্ত আম আসায় স্বপ্ন বুনতে আরম্ভ করেছিলেন মাসুদ। কিন্তু এক আগুনেই দেড়শ আম ও পেয়ারর গাছ পুড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তিনি।
তিনি জানান, এভাবে আগুন লাগানো হলে তিনি পথে বসবেন। অন্যান্য বাগান মালিকরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ইতোমধ্যে। এজন্য তিনি দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
স্থানীয় আমচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তারা বিষয়টি জানার পর পুড়ে যাওয়া বাগান ঘুরে দেখেছেন। ফল চলে আসার পর বাগানে আগুন দেওয়ার ঘটনা পরিকল্পিত এবং জঘন্য অপরাধ। এতে তারাও আতঙ্কিত।
এ ঘটনার নিন্দা জানান তিনি।
কানসাটের আমচাষি ও নাচোলে সমন্বিত ফলবাগানের মালিক রিপন কুমার রায় জানান, নাচোল উপজেলা মূলত ধানের জেলা হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে এ উপজেলার বাইরের অন্তত ৩ শতাধিক উদ্যোক্তা এ এলাকায় প্রায় এক হাজার বিঘা জমি লিজ নিয়ে আমসহ বিভিন্ন ফলের বাগান করেছেন। সবগুলো খামারই অন্তত ১০ বছর ব্যাপী দীর্ঘ সময়ের জন্য লিজ নিয়ে বিনিয়োগ করা। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তাদের মতো উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। পর পর দুটি ঘটনায় অন্তত ১১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গাছ লাগানোর পর সন্তানের মতো করে ৩ বছর পরিচর্যা শেষে আগুন দিয়ে ফলসহ গাছ পুড়িয়ে ফেলার কারণে উদ্যোক্তারা আতঙ্কিত। তিনি প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করার অনুরোধ জানান।
আম বাগানে আগুন লাগানোর পর পর ২টি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাচোল ফলচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান। তিনি এ ধরনের জঘন্য অপরাধীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির দাবি করেন প্রশাসনের প্রতি।
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ভোরের কোন এক সময় মাসুদ রানার বাগানের পশ্চিমপাশে একটি গমের ক্ষেতে আগুন দেওয়া হয়। এরপর সে আগুনে মাসুদের বাগানের শতাধিক আমগাছ এবং পেয়ারাগাছ পুড়ে যায়। এঘটনায় স্থানীয় কৃষক কবির আলীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত কৃষক নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে দোষ চাপালেন পাশের জমির মালিক কেনু আলীর ও আবু তালেবের ওপর।
তার দাবি, আবু তালেবের জমিতে লাগানো আগুন তার জমির আংশিক গমের উচ্ছিষ্টাংশ পুড়ে মাসুদের বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে আবু তালেব জানান, তিনি শিবগঞ্জ উপজেলায় থাকেন। তার পক্ষে নাচোলে গিয়ে আগুন লাগানো অসম্ভব।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন কেনু আলী।
এর আগে নাচোলের নওদাপাড়ায় ৪০ বিঘা জমি দীর্ঘমেয়াদে ইজারা নিয়ে গড়ে তোলা আম বাগানে গত ১৭ এপ্রিল রাতে আগুন দেওয়া হয়। বাগানটির মালিক শিবগঞ্জ উপজেলা রানিহাটি গ্রামের জুয়েল ও লুৎফর।
এ ঘটনায় নাচোল উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামের জমসেদ ও ওবায়দুলের বিরুদ্ধে বাগানের ফলসহ ৪০০ আমগাছ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় জুয়েল বাদী হয়ে ১৮ এপ্রিল নাচোল থানায় মামলা করেন।
এ ব্যাপারে নাচোল থানার ওসি (তদন্ত) মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, গত ১৮ এপ্রিল এবং ২৩ এপ্রিলের ফল বাগান পোড়ানোর ২টি অভিযোগ এসেছে। দুটি ঘটনায় তদন্ত চলছে। দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
এসএএইচ