ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

দশ বছর ধরে মেয়ের অপেক্ষায় খোদেজা বেগম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
দশ বছর ধরে মেয়ের অপেক্ষায় খোদেজা বেগম

বাগেরহাট: ‘২০১২ সালে অভাবের তাড়নায় ১৫ বছরের মেয়ে পারভীন আক্তার সুমিকে চাকরির জন্য ননদের মেয়ে ফাতেমা আক্তারের কাছে দিয়েছিলাম। ১০ বছরেও নাড়ি ছেড়া ধন ফিরে আসেনি আমার কাছে।

মেয়ের খোঁজ নিতে বাড়িতে গেলে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয় ফাতেমা ও তার স্বামী শের আলী। মনে হয় মরার আগে আর মেয়েকে দেখে যেতে পারব না’। কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই বাংলানিউজকে এসব কথা বলছিলেন বাগেরহাট সদর উপজেলার দেপাড়া গ্রামের আবুল খাঁয়ের স্ত্রী খোদেজা বেগম।

মেয়ের শোকে প্রতিদিন এভাবে কান্না করেন ষাটোর্ধ এই নারী। সুমি ছাড়াও খোদেজা বেগেমের দুই মেয়ে ও এক ছেলে আছে। ছেলে আল আমিন ও স্বামী আবুল খাঁ ভ্যান চালায় এবং দুই মেয়ে স্বামীর বাড়িতে। মেয়ের শোকে অসুস্থ্ হয়ে পড়েছেন খোদেজা বেগম। একসময় মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও, এখন আর তা পারেন না। সারাদিন শুধু মেয়ের জন্য বিলাপ করেন। আর অপরিচিত কোনো মানুষের সঙ্গে দেখা হলেই মেয়েকে ফেরানোর জন্য সহযোগিতা চান।

খোদেজা বেগম ও তার পরিবারের দাবি সুমিকে ফরিদপুরের জাকির ও খুলনার আজমলের মাধ্যমে ভারতে পাচার করে দিয়েছে ফাতেমা। তবে ১০ বছরেও ফাতেমার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে কোথাও কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি তারা।

ফাতেমা বেগম রামপাল উপজেলার গিলাতলা গ্রামের জলিল ফিরুকানা ও রিজিয়া বেগমের মেয়ে। তার মা রিজিয়া গেম আবুল খাঁ’র বোন। বর্তমানে স্বামী শের আলীর সঙ্গে ফাতেমা খুলনা শহরের সেনহাটি ২ নম্বর ঘাটে বসবাস করেন।

খোদেজার প্রতিবেশী সাফিয়া বেগম বলেন, ফাতেমা এসে সুমিকে নিয়ে গেল, আর ফিরে আসেনি। শুনেছি ভারতে পাচার করে দিয়েছে। কখনো কাউকে মেয়েটা ফোনও করেনি।

সুমির বাবা আবুল খাঁ বলেন, ফাতেমা আমার বোনের মেয়ে। মামা হয়ে আমি ওর পা ধরে কান্না করেছি মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য। তারপরও সে আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দেয়নি। বরং এখন গেলে আমাদের গালিগালাজ করে ফাতেমা ও তার স্বামী শের আলী।

খোদেজা বেগম বলেন, প্রথম দিকে ভেবেছিলাম মেয়েটাকে হয়ত কোথাও কাজে দিয়েছে। কিন্তু বছর দুই আগে বিভিন্নভাবে জানতে পারি ওরা আমার মেয়েকে ভারতে পাচার করে দিয়েছে। এরপর বারবার ফাতেমার কাছে যাই। গেলেই বলে বিয়ে করে তোমার মেয়ে ফিরে আসবে। বেশি জ্বালাবা না। তালে কিন্তু মেয়েকে আর কখনো ফিরে পাবা না।

এতদিনেও কেন আইনের আশ্রয় নেননি এমন প্রশ্নে খোদেজা বেগম বলেন, কার কাছে যাব, কোথায় যাব, টাকা পাব কোথায়? আবার সুমির বাবা রইছে খুলনা। খুলনা থেকে এবার আসলে থানায় যাব।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ফাতেমা বেগম (০১৯৩৪-৭৪৫৫২২) ও আজমলকে (০১৮৭৫-৮১৫৩৭৬) ফোন করা হলে তাদের মুঠোফোন দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এসএম আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। ভুক্তভোগী পরিবারটি আমাদেরকে বিষয়টি জানায়নি। পরিবারটি যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ  সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, ১৪ অক্টোবর ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।