ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সোনার মানুষ গড়ার জন্য বিতর্ক জরুরি মাধ্যম: শিক্ষামন্ত্রী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
সোনার মানুষ গড়ার জন্য বিতর্ক জরুরি মাধ্যম: শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি

চাঁদপুর: শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে সোনার বাংলার জন্য আমরা এমন মানুষ চাই, যে মানুষ হবে মানবিক, সৃজনশীল, বিজ্ঞান মনস্ক ও প্রযুক্তি বান্ধব।

আর এমন মানুষ গড়বার জন্য বিতর্ক খুব একটা জরুরি মাধ্যম। সে বিতর্কের একটি জাতীয় পর্যায়ের উৎসব আমরা এই চাঁদপুরে আয়োজন করতে পেরেছি, সে জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ স্মারক জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, আজকে এই উৎসবে সারাদেশে থেকে অনেক সেরা বিতার্কিক এসেছেন। আমরা বলছি এটি দেশ সেরা বিতর্কাকিদের সর্ববৃহৎ মিলনমেলা। যারা এই বিতর্কের মধ্য দিয়ে যুক্তির আলো ছড়াচ্ছেন, যারা নিজেদেরকে উন্নত মনের মানুষ হিসেবে তৈরী করছেন, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। আমার অনুরোধ থাকবে, দেশ সেরা এই বিতার্কিকরা উৎসবের সমাপনী পর্যন্ত থেকে নতুন প্রজন্মকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলবেন এবং বিতর্কের কৌশল গুলি শিখিয়ে দিবেন।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. অসিত বরণ দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং বিতার্কিক ড. শামীম রেজা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ) সাবেক সভাপতি ও সাবেক বিতার্কিক ডাঃ আব্দুন নুর তুষার।

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বিতার্কিকদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, আমি বহুদিন থেকে বলে আসছি- শ্রেণী কক্ষে যে মূল্যায়ন হয়, তোমরা পরীক্ষা দিচ্ছ, পরীক্ষার জন্য মুখস্ত করছ, মুখস্তটা হচ্ছে তোতা পাখির মতো এবং পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছো। কিন্তু জ্ঞানটা তোমার মধ্যে ডুকছে কিনা, তোমাকে আলোকিত করছে কিনা, সে প্রশ্ন করার কখনো সুযোগ পাওনি। তোমার মুখস্থ বিদ্যার পরীক্ষা হয়, তোমার সক্ষমতার পরীক্ষা হয় না। এমন হতো যদি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। অর্থাৎ তোমার সক্ষমতার পরীক্ষা নেওয়া হত পাঠ্যপুস্তকের পরীক্ষার সঙ্গে। আমি বিদেশে অনেক বিদ্যালয় দেখেছি, শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করছেন এবং তার আলোকে পরীক্ষার নম্বর দেওয়া হচ্ছে। আমি চাই আমাদের শিক্ষার যে সংস্কার হচ্ছে, তাতে তোমাদেরও একটি ভূমিকা থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, আমরা কেন বিতর্ক করি, বিতর্ক মানে তর্ক করা নয়। মনে রাখতে হবে বিতর্ক হচ্ছে একটি ফরমাল ব্যাপার। বিতর্ক কররে আমাদেরকে লেখা-পড়া করতে হয়। কারণ মনের যে হাসপাতাল, সে হাসপাতাল কিন্তু গ্রন্থের মাধ্যমে খোলে অর্থাৎ বইয়ের মাধ্যমে। বিতর্ক করার জন্য যে পড়া-লেখা করা হয় এবং সেটার মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন হয়, তাতেই মাইক্রোফোনে দাঁড়াবার সাহস সঞ্চিত হয়। এই সাহস কিন্তু আমরা পরের সময়ে কাজে লাগাতে পারি।

অধ্যাপক এবং বিতার্কিক ড. শামীম রেজা বলেন, আজকে নতুন প্রজন্ম কেন বিতর্কে আসবেন। আমাদের অনেক কিছু করার আছে। কারণ এখন অনেক সহজে টাকা উপজার্ন এবং খ্যাতি অর্জন করা যায়। যদিও আইমান সাদিকের মতো বিখ্যাত হওয়া খুব কঠিন। সে এমন বিখ্যাত অনেক চেষ্টা করেও তার কাছে যেতে পারব না। কিন্তু মনে রাখতে হবে আইমান সাদিক বিখ্যাত হয়েছে হঠাৎ কিছু করে না। অসাধারণ তার সামাজিক অবদানের কারণে। যারা আজকে উপস্থিত হয়েছে প্রত্যেকে তাদের কাজের মাধ্যমে অবস্থান তৈরী করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা সবাই যুক্তিকে পছন্দ করি। আমরা গণতন্ত্র মূলবোধে বিশ্বাস করি। আমরা হানাহানিতে বিশ্বাস করি না। আমরা অগ্রগতি ও প্রকৃত উন্নয়নে বিশ্বাস করি। আমরা মানুষের অগ্রগতিতে বিশ্বাস করি এবং আমরা যে যেখানে আছি কিংবা কাজ করছি না কেন, তার মূলে আছে যুক্তি। আমরা যদি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে যুক্তির সে সমাজ গড়ে তুলতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বক্তব্যে বলেন, বিতর্কের মাধ্যমে আমার বিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মত প্রকাশ করতে পারি। বর্তমান সময়ে আমরা কেউ কাউকে মানতে চাই না, কথা শুনতে চাই না। ভিন্নমতকে রীতিমত পিষে পেলতে চাই। ঠিক এই মুহুর্তে আমাদের মধ্যে বিতর্ক পরমতসহিষ্ণুতা সৃষ্টি করতে পারে। বিতর্ক উৎসব সে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

সাবেক বিতার্কিক ডাঃ আব্দুন নুর তুষার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন আমার মানুষ, আমার বাংলাদেশ। তিনি বলতেন সোনার মানুষদের কথা। সোনার মানুষ কোথায় তৈরী হয়। সোনার মানুষ তৈরী হয় যখন তার অন্তর পরিপূর্ণ হয় সে আভায় ও আলোয়ে, যে আলোয় মানুষ আলোকিত হওয়ার জন্য লক্ষ কোটি বছর সংগ্রাম করে আসছে। তাই আমাদের চিন্তাশীলতা কাজে লাগাতে হবে দেশ, সমাজ ও পৃথিবী এবং গোটা মানবজাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ, চাঁপুর জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ড. জে আর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান ও টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিকসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ স্মারক জাতীয় বিতর্ক উৎসবের চেয়ারম্যান সাব্বির আজম। অনুষ্ঠানে অতিথিদেরকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী এবং মন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে বই দেওয়া হয়।

এর আগে অতিথিদেরকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন এবং সকালে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।

তিন দিনব্যাপী এই জাতীয় বিতর্ক উৎসবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক বিতার্কিক অংশগ্রহণ করেছেন। শনিবার (১৫ অক্টোবর) সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এমপি।

বির্তক উৎসবের মিডিয়া পার্টনার-সময় টেলিভিশন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ইংরেজী দৈনিক দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও চাঁদপুর প্রেসক্লাব।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।