ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

গুম-হত্যার শিকার সাংবাদিককে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
গুম-হত্যার শিকার সাংবাদিককে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান!

কুষ্টিয়া: চলতি বছর জুলাই মাসে গুম-হত্যার শিকার হাসিবুর রহমান রুবেল নামে এক সাংবাদিককে গ্রেফতারে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গতকাল শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে অভিযানটি চালানো হয়।

এর নেতৃত্ব দেন মিলপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আসাদুল ইসলাম।

গত ৭ জুলাই কুষ্টিয়ার গড়াই নদী থেকে উদ্ধার হয় রুবেলের মরদেহ। তিন মাস আগে অর্ধগলিত মরদেহটি উদ্ধারও করে পুলিশ। তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, সে রহস্যও উন্মোচন করতে পারেনি এ বাহিনী।

রোববার (২২ অক্টোবর) স্থানীয়দের মারফত এ তথ্য জানা যায়। অভিযানের ঘটনায় স্থানীয়দের মনে পুলিশের ভূমিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা বলেন, যে ব্যক্তির মরদেহ পুলিশই উদ্ধার করলো, তাকে গ্রেফতার করতে কীভাবে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়? এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব পুলিশের আছে কিনা, সে ব্যাপারে প্রশ্ন করেন তারা।

নিহতের মা অভিযোগ করেন, পূর্ব পকিল্পিতভাবে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশ খুনিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। অথচ, মৃত ছেলেকেই গ্রেফতার করতে যায় সদস্যরা।

রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান জানান, রুবেলের নামে একটি মামলায় ওয়ারেন্ট জারি হয়। যে কারণে তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশ বাড়ি এসেছিল। পরে মৃত্যুর সনদ দেখালে সদস্যরা ফিরে যান। রুবেলের হত্যার রহস্য উন্মোচন না হওয়ায় হতাশ তিনি।

অভিযানের ব্যাপারে এএসআই আসাদুল ইসলাম আসাদ বলেন, হাসিবুর রহমান রুবেলের নামে চেক সংক্রান্ত একটি মামলায় (এনআইডি এক্টের ১৩৮ ধারায়) ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। আদালতের সিআর ৩১০/২২ নম্বরের ওয়ারেন্ট তার নামে ইস্যু হয়। যার ভিত্তিতে তার বাড়িতে গেলে পরিবারের সদস্যরা রুবেলের মৃত্যুর সনদ দেখান। পরে আমরা ফিরে আসি।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, নিয়ম মেনেই পুলিশ নিহতের বাড়ি গিয়েছিল। তারা মৃত্যুর সনদ দিলে সেটি আদালতে দাখিল করা হয়।

নিহত রুবেল কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। কুষ্টিয়ার হাউজিং এ ব্লকের হাবিবুর রহমানের ছেলে ছিলেন রুবেল।

জানা গেছে, গত ৩ জুলাই রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া বাবর আলী গেট সংলগ্ন অফিসে কাজ করছিলেন রুবেল। এ সময় তার কাছে একটি কল আসে। সেটি রিসিভের পর সিঙ্গার মোড়ের দিকে যান তিনি। এরপর থেকেই রুবেলের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তার নিখোঁজের ঘটনায় কুষ্টিয়ায় মানববন্ধন করে সাংবাদিক মহল। নিখোঁজের ৫ দিন পর গত ৭ জুলাই গড়াই নদী থেকে হাসিবুর রহমান রুবেলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়।

ধারণা করা হয়, প্রথমে গুম ও পরে হত্যার শিকার হয়েছিলেন রুবেল। তার ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান জানিয়েছিলেন, নিখোঁজের ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন তারা। পরে গড়াই নদী থেকে তার বড় ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার হয়। প্রথমে চেনা না গেলেও পরে পরনের পোশাক ও মানিব্যাগের পরিচয়পত্র দেখে পরিচয় শনাক্ত হয় রুবেলের।

রুবেলের লাশ উদ্ধারকারী ও কুমারখালি থানার এসআই আব্দুর রাজ্জাক সে সময় বলেছিলেন, অন্যত্র হত্যার পর কেউ মরদেহ গড়াই নদীতে ফেলে যায়। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন না থাকলেও গলায় দাগ ছিল। রুবেলকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে হত্যা করা হয় বলেও ধারণা করেছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।