ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

গাছের সঙ্গে বেঁধে গৃহবধূকে নির্যাতন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২২
গাছের সঙ্গে বেঁধে গৃহবধূকে নির্যাতন

কুমিল্লা: যৌতুকের টাকার জন্য কুমিল্লার দেবিদ্বারে গাছের সঙ্গে গৃহবধূর দু’হাত বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে শ্বশুর-শাশুড়ি ও দুই ননদের বিরুদ্ধে।  

বুধবার (২৬ অক্টোবর) উপজেলার ধামতী গ্রামের কোরেরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।  

জানা গেছে, বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা এনে দিতে গতকাল বুধবার বিকেলে গৃহবধূ জ্যোৎস্নাকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন চাপ দেন। কিন্তু টাকা এনে দিতে রাজি না হওয়ায় জ্যোৎস্নাকে শ্বশুর, শাশুড়ি ও দুই ননদ মিলে দুইটি নারিকেল গাছের সঙ্গে দু’হাত বেঁধে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান। স্থানীয়দের চাপে নির্যাতনের শিকার গৃবধূর হাতের বাঁধন খুলে দিলেও ঘরে আটকে রেখে রাতে আবারও তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। খবর পেয়ে গৃহবধূর স্বজনরা তাকে উদ্ধারে ওই বাড়িতে গেলে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে রাতে জ্যোৎস্নাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান স্বজনরা।

ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ জ্যোৎস্না বাংলানিউজকে জানান, ১৬ বছর আগে ধামতী গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে হেলালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বর পক্ষকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক পরিশোধ করতে হয়। বিয়ের পর তার (জ্যোৎস্নার) বাবা মারা যান। এরই মধ্যে জ্যোৎস্না-হেলালের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম হয়। ১২ বছর আগে স্বামী হেলাল বিদেশ (ওমান) যাওয়ার সময় আরও ২ লাখ টাকার জন্য চাপ দেয়। তখন জ্যোৎস্নার ভাইয়েরা ১ লাখ টাকা দেন। গত এক বছর আগে হেলাল দেশে ফিরে আবারও বাকি ১ লাখ টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে জ্যোৎস্নার ভাইদের পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। হেলাল ফের বিদেশ পাড়ি জমান। এর পর স্বামীর প্ররোচণায় শ্বশুর দুলাল মিয়া, শাশুড়ি জুলেখা বেগম, দুই ননদ মৌসুমী ও পাখী প্রতিনিয়ত জ্যোৎস্নার ওপর নির্যাতন শুরু করেন। মাথার চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে প্রায় শেষ করেছে। তাদের কিল-ঘুষি আর থাপ্পড়ে দাঁতগুলোও নড়ে গেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে জ্যোৎস্নাকে তার বাবার বাড়ি থেকে ১ লাখ টাকা এনে দিতে ফের অমানবিক নির্যাতন চালায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও দুই ননদ। একপর্যায়ে জ্যোৎস্নার দু’হাত দুইটি নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়। রাতে ঘরে নিয়েও চালানো হয় নির্যাতন।

এ ব্যাপারে জ্যোৎস্নার মা ফরিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, মেয়েকে অনেকবার নিয়ে আসতে চেয়েছি। কিন্তু মেয়ে তার চার সন্তানের মায়ায় স্বামীর বাড়ি থেকে আসেনি। গত ১৫ বছরে অন্তত ১০-১২টি সালিশ করা হয়েছে। সালিশে ছেলের পক্ষ রায় মেনে পরে উল্টোটা শুরু করে। কোনো সমাধান না হওয়ায় এখন আর কেউ সালিশ করতে আসেন না। আমার আত্মীয়-স্বজনকে পাই না। আমরা গরিব মানুষ, কত টাকা দিতে পারি? আমার চার ছেলে পেশায় দিনমজুর।  

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, সকালে শাশুড়ি জুলেখা বেগমকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। অভিযুক্ত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।