ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিআরটি প্রকল্পের ছড়িয়ে থাকা নুড়ি পাথর বাড়াচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
বিআরটি প্রকল্পের ছড়িয়ে থাকা নুড়ি পাথর বাড়াচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা

ঢাকা: ‘সড়ক ভালো থাকলে গাড়ি চালাতে পরিশ্রম হয় না। আর যদি ভাঙা, খানাখন্দে ভরা থাকে তবেই মুশকিল।

সেই সঙ্গে সড়কে যদি নুড়ি পাথরের কনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে, এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এমন সড়কে খুব সাবধানে মোটরসাইকেল চালাতে হয়। তবুও চাকার নিচে পাথরের কণা পড়লেই বিপত্তি ঘটে যায়। ’

কথাগুলো বলছিলেন মোটরসাইকেল চালক আশরাফুল আলম উজ্জল। তিনি গাজীপুরের বাসিন্দা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত কয়েকদিন আগে টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় সড়কে মোটরসাইকেল স্লিপ করায় পড়ে যান তিনি। এ ঘটনায় তিনি ডান হাতের কুনইয়ের আঘাত পান। তার সঙ্গে থাকা আরোহীও পড়ে হাত ও পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন।

গাজীপুরা থেকে টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর হয়ে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত মোটরসাইকেলে চালাতে গেলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। কারণ এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নুড়ি পাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ফলে প্রায়ই মোটরসাইকেল চালকরা পড়ে যাচ্ছেন। এতে কেউ কেউ সামান্য জখম হলেও অনেকেই গুরুতর আহত হচ্ছেন।

ভুক্তভোগী মোটরসাইকেল চালকরা জানান, গাজীপুরে দীর্ঘদিন ধরেই বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এতে বছরের পর বছর যানজটসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন মোটরসাইকেল চালক-আরোহীরা। সড়কে বেশির ভাগ স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নুড়ি পাথর। এগুলো থাকলে দুই চাকার যান মোটরসাইকেল চালাতে খুব কষ্ট হয়। যতই সাবধানে চালানো হোক না কেন, নুড়ি পাথরের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ব্যালেন্স ঠিক থাকে না। এতে সামান্য ব্রেকও ধরা যায় না। এই সড়কে দুর্ঘটনার মুল কারণ হয়ে পড়েছে সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নুড়ি পাথর।

একটি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের এরিয়া ম্যানেজার হসানুর রহমান। কাজের প্রয়োজনে তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। সহজে যে কোনো স্থানে যেতে ব্যবহার করেন মোটরসাইকেল।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, উত্তরা-টঙ্গী-গাজীপুরা হয়ে বোর্ডবাজার পর্যন্ত আমার কাজের পরিধি। সেলস কেমন চলছে তা দেখতে প্রায় প্রতিদিন আমাকে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। কিন্তু গাজীপুর-টঙ্গী সড়কে মোটরসাইকেল চালাতে এখন খুব ভয় লাগে। একদিকে যানবাহন চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা নেই, বিআরটি কাজ চলছে, অপরদিকে সড়ক জুড়ে পড়ে রয়েছে নুড়ি পাথর। এগুলোর কারণে খুব ভয় লাগে। প্রায়দিনই খবর পাই আমাদের সেলসম্যানদের কেউ না কেউ মোটরসাইকেল থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছেন। আবার কারও মোটরসাইকেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে সড়কটি এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

আগামী বছরের (২০২৩ সাল) মে-জুনের মাঝামাঝি সময় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কটি চলাচলের উপযোগী হবে। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্প্রের ৭৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।

বিআরটিএ প্রকল্পের তথ্যমতে, মোট সড়কের মধ্যে উত্তরা থেকে টঙ্গীর চেরাগআলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড বিআরটি লেন এবং বাকি ১৬ কিলোমিটার থাকবে সমতলে। এই প্রকল্পের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ছয়টি ফ্লাইওভার। এর মধ্যে টঙ্গী থেকে হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত ফ্লাইওভারের দুটি লেন রোববার (০৬ নভেম্বর) যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে দুই কিলোমিটারের বেশি সড়কে ঢাকামুখী যানবাহন অনেকটা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে বলে মনে করছে বিআরটি সংশ্লিষ্টরা।

গাজীপুর থেকে টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুর হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত অংশ সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুরো সড়কেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নুড়ি পাথর। আগে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া সড়কের অংশ মেরামত করা হতো। কিন্তু এখন বৃষ্টির দিন শেষ হলেও সড়কের প্রায় জায়গাতে দেখা যায়, নুড়ি পাথর উঠে আসছে। সড়কে যানবাহন চলাচলের কারণে পাথরগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে।

টঙ্গীর চেরাগআলীতে গাজীপুর সিটির  অঞ্চল-১ এর অফিসের সামনের দুই পাশের সড়কেই বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এই এলাকায় সড়কে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নুড়ি পাথর। সড়কের খানা-খন্দ সংস্কারের সময় যে পাথর দিয়ে বেজ কোর্ড করা হয়েছিল সেই পাথরগুলো যানবাহনের চাকার ঘষায় পুরো সড়কেই ছড়িয়ে পড়েছে।

চা দোকানি আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তায় পাথার আর পাথর। গাড়িও চলে, মোটরসাইকেলও চলে। ফলে সেই পাথরে পিছলে অনেকে মোটরসাইকেল ওয়ালারা পইড়া যায়। আবার রাস্তাও অনেক ভাঙাচুরা।

এদিকে টঙ্গী মিলগেট থেকে স্টেশন রোড হয়ে সেতুর নিচের পুরো রাস্তার পাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নুড়ি পাথর। টঙ্গীব্রিজ থেকে আব্দুল্লাহপুর হয়ে হাউজবিল্ডিং ও আজমপুর এলাকায় সড়কের মাঝে ও পাশে অগনিত নুড়ি পাথর পড়ে আছে। এই সড়কের উভয় পাশে যানবাহনের জটলা হলে সে সময় মোটরসাইকেল চালকদের পাশ দিয়ে যেতে হয়৷ ওই সড়কের পাশেও অগনিত নুড়ি পাথর থাকতে দেখা গেছে৷

উত্তরা হাউজবিল্ডিংয়ের বিএনএস সেন্টারের পাশে ফুটপাতে বসা শহিদুল নামে এক হকার জানান, এখানে প্রায় সময়ই মোটরসাইকেল পিছলে পড়ে যায়৷ কারণ সড়কের পাশে অনেক ছোট ছোট পাথর রয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে যে গর্তগুলো ছিল, সেগুলোতে নুড়ি পাথর দিয়ে বেজ কোর্ড তৈরি করা হয়েছে। এরপর আসফাল ঢালাই হবে। এখনও কাজ চলছে বলে হয়তো এই নুড়ি পাথর রয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলে এই পাথর আর থাকবে না। তবে বিষয়টি আমাদের ট্রাফিকের পক্ষ থেকে বিআরটি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।     

টঙ্গী ফ্লাইওভারের এক পাশ খুলে দেওয়ায় স্টেশনরোড থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত কোনো যানজট নেই।

গত ১১ বছর ধরেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলমান বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। আর এতেই গাজীপুরবাসির ভোগান্তির শেষ নেই।

এদিকে বিআরটিএ প্রকল্পের তথ্যমতে, তাদের ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে উত্তরা থেকে টঙ্গীর চেরাগআলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড বিআরটি লেন। বাকি ১৬ কিলোমিটার থাকবে সমতলে। এই প্রকল্পের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ছয়টি ফ্লাইওভার। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্প্রের ৭৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের (২০২৩ সাল) জুনের মাঝামাঝি সময় বিআরটি প্রকল্পের ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের উপযোগী হবে।

এদিকে, টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুর এলাকায় যানজটের ভোগান্তি দূর করতে গত ৬ নভেম্বর টঙ্গী থেকে হাউজবিল্ডিং পর্যন্ত টঙ্গী সেতুর ঢাকামুখী দুটি লেন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে দুই কিলোমিটারের বেশি সড়কে ঢাকামুখী যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে বলে মনে করছে বিআরটি সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের টঙ্গী অংশের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মহিরুল ইসলাম খান জানান, উত্তরা থেকে টঙ্গী রেলগেট পর্যন্ত উড়াল সড়কের দৈর্ঘ্য দুই দশমিক দুই কিলোমিটার। সেতুর বাকি অংশের কাজ চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্প্রের ৭৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
এসজেএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।