ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত সিন্দিয়াঘাট ডাকবাংলো

একরামুল কবীর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত সিন্দিয়াঘাট ডাকবাংলো সিন্দিয়াঘাট ডাকবাংলো

গোপালগঞ্জ: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত গোপালগঞ্জের ঐতিহাসিক সিন্দিয়াঘাট ডাকবাংলো। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে জাতির পিতা বহুবার এখানে এসেছে এবং রাত কাটিয়েছেন।

 

মুকসুদপুর উপজেলার গোহালা ইউনিয়নের এই ডাকবাংলোটিতে তাঁর জীবনের অনেক ইতিহাস ও স্মৃতি রয়েছে। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এই ডাকবাংলোকে ঘিরে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ছাত্রজীবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সময় পশ্চিম পাকিস্তানের অযৌক্তিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বার বার কারাভোগ করতে হয়েছে। তখন গোপালগঞ্জ ফরিদপুরের একটি মহাকুমা ছিল। বিভিন্ন সময় মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে ও রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধুকে ফরিদপুরসহ আশপাশের এলাকায় নৌপথে আসা যাওয়া করতে হতো। তখন বঙ্গবন্ধু যাত্রাপথে এই ডাকবাংলোয় রাত্রিযাপন করতেন। বঙ্গবন্ধুর রাত্রিযাপনের খবর শুনলে স্থানীয় রাজনীতিবীদরা তাঁর সঙ্গী হতেন। নদীর ঘাটে বা ডাকবাংলোয় বসে বঙ্গবন্ধু তাদের সঙ্গে নানা বিষয়ে গল্প ও রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা করতেন। তখন ডাকবাংলোটিতে টিনের বেড়া আর ছনের চালা ছিল। এখানে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহারিত একটি চেয়ারও রয়েছে।  

২০২১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক এই ডাকবাংলোটি সংস্কার করা হয়। পরবর্তীকালে এই ঐতিহাসিক স্থানটি সংরক্ষণের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে। বর্তমানে মন্ত্রণালয় ডাকবাংলোটির ইতিহাস সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্যে এখানে “সিন্দিয়াঘাট জাদুঘর কমপ্লেক্স” নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।  

ডাকবাংলোটির প্রাকৃতিক ও তৎকালিন পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে জাতির পিতার ম্যুরাল, সার্কিট হাউস, শিশু পার্ক, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লেখা বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য তুলে ধরা হবে। এতে নতুন প্রজন্ম এই ঐতিহাসিক স্থানটিতে এসে বঙ্গবন্ধু ও তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন এবং সিন্দিয়াঘাট জাদুঘর কমপ্লেক্সের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

গোহালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মোড়ল বলেন, আজকে আমাদের খুব আনন্দ লাগছে, আমরা ছোট সময় দেখেছি বঙ্গবন্ধু এইখানে এসেছেন। স্টিমারে নেমে এই ডাকবাংলোয় রাত্রিযাপন করেছেন। আজকে সেই ডাকবাংলোয় বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস ধরে রাখার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে পার্কসহ অনেক কিছু হবে। মানুষজন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসবেন তারা জানতে পারবেন এখানে বঙ্গবন্ধু আসতেন এবং রাত্রিযাপন করতেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এই জায়গার কথা একাধিকবার স্মরণ করেছেন।  

মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান টুটুল বলেন, এটা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত জায়গা। আমি মনে করি উনার শৈশব থেকে যৌবন, যৌবন থেকে একেবারে শেষ পর‌্যন্ত এই জায়গাটি উনি কখনো ভুলেন নাই। এটা উনার আত্মজীবনীতেও লিখে গেছেন। সেই জায়গাটিতে তার স্মৃতি রক্ষার্থে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী যে প্রজন্ম আসছে তারা এখানে আসতে পারবে, দেখতে পারবে। এখানে বঙ্গবন্ধুর লেখা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই থাকবে। এখানে আসা নতুন প্রজন্ম এটা পড়তে পারবে এবং বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারবে। আমরা এবং আমাদের আগামী প্রজন্ম আন্তরিকভাবে খুশি।

মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম শিকদার বলেন, এখানে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময় যাত্রাবিরতি করেছেন। বিশেষ করে গোপালগঞ্জ থেকে ফরিদপুর যাওয়ার সময় যাত্রাবিরতি করেছেন। এই জায়গাটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে যাচ্ছে আমরা এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

মুকসুদপুর উপজেলার সিন্দিয়াঘাট ডাদুঘর কমপ্লেক্স আর্কিটেক মঞ্জুর কে এইচ উদ্দিন বলেন, আমরা এই ঐতিহাসিক জায়গাটার উল্লেখ পায় বঙ্গবন্ধুর নিজের আত্মজীবনীতে। এ রকম একটা ঐতিহাসিক স্থাপনার ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এই জায়গায় একটা স্থাপনা তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনায় এই জায়গায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে ল্যান্ড স্কেপিংয়ের মাধ্যমে ডাকবাংলোটিকে গুরুত্ব দিয়ে একটি ছোট ডাকবাংলো করা হবে। এখানে ম্যুরালের মাধ্যমে উনার সময়কার যে ঘটনা আছে, যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার যে বিবরণ আছে সেগুলো থাকবে, ল্যান্ড স্কেপিং, মানুষের বসার ব্যবস্থা, মানুষ এসে এই বাড়িটার আদিম ও অকৃত্রিম রূপে দেখতে পায় সে ব্যবস্থা করা হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, যখন লঞ্চ এবং জাহাজ ছিল। পরবর্তীকালে বড় বড় গয়নার (বড় নৌকা) নৌকা ছিল তখন বঙ্গবন্ধু এখানে এসে থাকতেন। সেই সময়টা ঠিক রেখে জাতির পিতার স্মৃতিকে সংরক্ষণের জন্য এখানে একটি জাদুঘর হবে।  

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনেকবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। গোপালগঞ্জ জেলখানা থেকে যখন জেলা সদর ফরিদপুরে তাকে স্থানান্তরিত করা হতো তখন বিভিন্ন সময় হাজিরার জন্য যেতে হতো। একদিনে পৌঁছানো যেত না। রাত্রে থাকতে হতো। সিন্দিয়াঘাট তখন ইরিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের ছিল পরবর্তীকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হয়ে যায়। সেই ইরিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের এই রেস্ট হাউসটা। এইখানে উনি থাকতেন। তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে অনেক জায়গায় তিনি এই জায়গা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছেন। স্মৃতিচারণে যে ভাবে লেখা আছে এই ঘাটেই তিনি বসতেন। এখানে রাত্রিযাপন করার সময় আশপাশের গ্রাম থেকে তাঁর ভক্তরা আসতেন। আশপাশের বাড়ি থেকে রান্না করে মানুষ খাবার নিয়ে আসতেন। এটা জাতির পিতার স্মৃতিধন্য একটা জায়গা। এই জায়গাটা আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। সেই উদ্যোগটির কাজ শুরু হলো। আমরা এই জায়গাটি চিহ্নিত ও উদ্ধার করেছি। অনুষ্ঠানিকভাবে এটা সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজ শুরু হলো। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে আমাদের প্রচেষ্টা শুরু হলো।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।