পঞ্চগড়: উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। যার অধিকাংশই শিশু।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। একই অবস্থা জেলার বাকি ৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও।
জানা গেছে, অনেক বাবা-মা সর্দি, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। এছাড়া শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অন্যান্য রোগও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ জন শিশু, হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন। এর মধ্যে কিছুটা ঝুকিপূর্ণদের ভর্তি করা হচ্ছে হাসপতালে, বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে বাড়িতে। এছাড়া প্রায় ১০০ জনের মতো বয়স্ক রোগী শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বাড়ে। এ কারণে ভাইরাসজনিত রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাও বাড়বে। আবহাওয়া পরিবর্তনের এ সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে শিশুর দিকে একটু বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে যেন তারা কোনোভাবেই ভেজা অবস্থায় না থাকে। তাহলে ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে তারা কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাবে।
কথা হয় পঞ্চগড়ের কাজিরহাট এলাকা থেকে আসা নাসরিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার শিশুর গত কয়েকদিন ধরে জ্বর, পাতলা পায়খানা ও বমি। বাইরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ না হওয়ায় বাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন এখানে চিকিৎসা পেলেও বাবু সুস্থ্য হচ্ছে না।
ফকিরহাট সরকারপাড়া এলাকার ২ মাস বয়সী রাজকে নিয়ে আসা মা আইভি আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে রাজ শীতজনিত রোগে অসুস্থ। ঠাঁকুরগাও এ চিকিৎসা নেয়া হলেও এখনো সে সুস্থ্য হয় নি। তাই গত দুদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখেছি। এখন আগের থেকে কিছুটা সুস্থ্য।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পঞ্চগড়ে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা হওয়ায় এখানে শীত সবার প্রথমে আসে। শীতের পাশপাশি শীতজনিত রোগ বিশেষ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের আউটডোরে ক্রমাশ এসব রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা তাদের সুস্থ্য রাখতে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি আমরা সবাইকে ঠান্ডার মধ্যে বাইরে ঘুরাফেরা না করা, বাচ্চাদের যথাসময়ে টিকা প্রদান করা, মায়ের দুধ পুরো ৬ মাস খাওয়ানো এবং ডায়রিয়া প্রতিরোধে হাত ধুয়ে শিশুকে খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি খাবার সবসময় ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি।
পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, পঞ্চগড়ে শীতের সাথে বিভিন্ন রোগবালায়ের আগমন ঘটেছে। শীত মৌসুমে আমাদের শিশুদের মধ্যে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগ সব সময় সক্রিয় রয়েছে। ইনডোরের পাশাপাশি আউটডোরেও চিকিৎসা প্রদানে আমাদের চিকিৎসকেরা সক্রিয় রয়েছে। তবে এই সময়ে সবাই সচেতন থাকলে শীতজনিত রোগাক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমানো সম্ভব হবে।
এদিকে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ৯টায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘন্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২
এসআইএ