ঢাকা: প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে মানব পাচার হচ্ছে। স্বপ্নের দেশে পৌঁছে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন শত শত তরুণ।
ইতোমধ্যে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু মানব পাচার চক্রের সন্ধানে কাজ করছে র্যাব, সিআইডি ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল। পাচারকারী সিন্ডিকেট ভ্রমণ ভিসায় বিদেশগামীদের ভারত, নেপাল, দুবাই, মিশর ও জর্দান ঘুরিয়ে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের পাচার করছে।
সম্প্রতি দুবাইয়ে ১৯ মাস মানবেতর জীবনযাপন করে দেশে ফিরে আসেন মো. মিজানুর রহমান শাওন নামে একজন ভুক্তভোগী। তার চাচাতো ভাই মো. দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৯ সালে মো. আবু বক্কর সিদ্দিক (৩৭) নামে একজন দালালের মাধ্যমে মিজানুরকে ইউরোপে পাঠাতে ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরপর আবু বক্কর আমার চাচাতো ভাই মিজানুরকে প্রথমে দুবাই পাঠান। সেখানে দুই মাস থাকতে হবে বলে জানান। সেখান থেকে ভিসা নিয়ে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলা হয়। কিন্তু এরপর আর ইউরোপে পাঠানো হয়নি।
দুবাইতে ১৯ মাস মানবেতর জীবনযাপন করে মিজানুর নিজ খরচে আবার দেশে ফিরে আসেন। দুবাইতে থাকাকালীন থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত না পেয়ে মিজানুর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশে আসার পর তার চিকিৎসা চলছে। এই ঘটনায় আবু বক্করের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় চলতি বছরের ১২ নভেম্বর একটি ডায়েরি করেছেন মিজানুরের চাচাতো ভাই দেলোয়ার হোসেন। এছাড়াও ১৩ নভেম্বর তিনি র্যাব-১-এ একটি অভিযোগ করেছেন।
জিডি ও অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর কাফরুলের সেনপাড়া, পর্বতা এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার। রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার ১১ নম্বর রোডের বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে গত ২০১৮/১৯ সালে ভুক্তভোগী মিজানুরকে ইউরোপের (ইতালি বা ফ্রান্স) পাঠানোর কথা হয়। এরপর আবু বক্কর পাঠাতে পারবেন বলে আশ্বাস দেন। ওই আশ্বাসের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় নগদ ও চেকের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা নেন। পরে মিজানুরকে প্রথমে দুবাই পাঠান। সেখান থেকে ইতালি বা ফ্রান্সে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু আবু বক্কর সেই দুটি দেশে পাঠাতে পারেননি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে তার (আবু বক্কর) কাছে ইউরোপে পাঠানো বাবদ দেওয়া ১৫ লাখ টাকা ফেরত চাইলে তিনি ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন ও হুমকি দিচ্ছেন।
ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাই দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশে গিয়ে উন্নত জীবনযাপন করবে এমন আশায় জমানো কিছু টাকার পাশাপাশি ঋণ করেও বেশকিছু টাকা যোগাড় করেন মিজানুর। এখন নিস্ব হয়ে গুরুতর মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
মিজানুরের মতো একইভাবে মানবপাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে টাকা খুইয়েছেন আরও অনেকে। নোয়াখালি জেলার সোনাইমুরি উপজেলার নাজিমুদ্দিন জানান, ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে। ইউরোপে পাঠাতে পারেনি। আমার কাছ থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছিল। পাঁচ বছর আমাকে ঘুরিয়েছে। কিন্তু বিদেশে পাঠাতে পারেনি। অনেক কষ্টে কিছু টাকা উঠিয়েছি। এখনো টাকা পাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, আমার থানায় প্রতিদিন বহু সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি আমরা কয়েকটি মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা ও সদস্যকে আটক করেছি। মানব পাচার ট্রান্স বর্ডার ক্রাইম। আন্তর্জাতিকভাবে এটাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। মানব পাচার রোধে র্যাব সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
এমএমআই/এমজেএফ