ঢাকা: আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি পালানোর সহযোগিতায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনাটি দুঃখজনক বলে আমরা মনে করি। যদি কারো অবহেলা থাকে, যদি কারো গাফিলতি থাকে, যদি কেউ ইচ্ছে করে এ কাজটি ঘটিয়ে থাকেন আমরা তার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। নিশ্চয়ই এটার তদন্ত কমিটি আমরা করবো এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।
তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা রেড এলার্ট জারি করেছি। যাতে তারা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে। আমাদের পুলিশ তাদের খুঁজছে। আশা করি খুব শিগগিরই তাদের ধরতে পারবো। আমরা বর্ডার এলাকাগুলোতেও বলে দিয়েছি, তারা যেন পালিয়ে যেতে না পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিচারের মাধ্যমে দুই জঙ্গির ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তাদের এনে কোর্ট হাজতে রাখা হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে প্রডিউস করার পর তাদের আবার নির্দিষ্ট রুমে নেওয়া হচ্ছিল। তখন আমরা জানলাম, যে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন তাদের মুখে স্প্রে করে জঙ্গিরা পালিয়ে যান। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা রেড অ্যালার্ট জারি করেছি।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, এটা নিয়ে নিশ্চয়ই আমরা তদন্ত কমিটি করব। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। সচিব, কারা মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনার সবাই এটা নিয়ে মিটিং করছেন। আমরা খুব সহসাই পরবর্তী নির্দেশনা জানাব।
তিনি বলেন, তদন্তের পরই আমরা বলতে পারব। কী স্প্রে দিয়েছে, কারা কারা দিয়েছে। আরেকটু সময় লাগবে। আমরা তদন্তের পর আপনাদের জানাব।
এ ঘটনা অ্যালার্মিং কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা সব জিনিসই সিরিয়াসলি দেখি। এজন্য অনেক জিনিস কন্ট্রোলে আনতে পেরেছি। জঙ্গির উত্থান হয়েছিল, জঙ্গির উত্থানও আমরা কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছি। হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেও আদালতে আসলে ডাণ্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফও খুলে দিতে হবে। সেই অনুযায়ী তারা সেখানে গিয়েছিল। কোন ফাঁক-ফোঁকরে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা তদন্তের আগে বলতে পারব না। কারো কোন গাফিলতি ছিল কিনা, কেউ এর সঙ্গে জড়িত কিনা সবকিছু আমরা দেখছি। কাউকে ছাড় দেওয়ার তো কোনো প্রশ্ন আসে না।
আদালতের মতো একটি স্থানে এমন ঘটনা ঘটলো- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কোর্টের নিরাপত্তা নিয়ে তো এর আগে প্রশ্ন উঠেনি। সবসময় তো এভাবেই চলে আসছে।
১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ, আজ আদালত থেকে জঙ্গি পালানোর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সূত্র আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা তদন্তের পর জানতে পারব।
এদিকে রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার আদালত থেকে পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে জেএমবির দুই সদস্য পালিয়ে যায়। জানা গেছে, দুই জঙ্গিকে মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় জেএমবির দুই সদস্য পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করলে তারা অপ্রস্তুত হয়ে যান। এই ফাঁকে জেএমবির ওই দুই সদস্য পালিয়ে যান।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জানান, আদালতে পুলিশ হেফাজত থেকে জেএমবির দুই সদস্য পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা আছেন। তারা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। জেএমবি সদস্যরা স্প্রে কোথায় পেলো এবং স্প্রেটি কীসের তা তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলায় চার্জ শুনানি ছিল। শুনানি শেষে আসামিদের নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের ওপর হামলা করে দুই জঙ্গির পালিয়ে যাওয়ার কথা শুনেছি। তবে তাদের নাম ঠিকানা ও ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০,২০২২
জিসিজি/এমএইচএস