ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লিউকেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের স্বপ্নপূরণের গল্প বাতিঘরের ‘অঙ্কুর’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
লিউকেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের স্বপ্নপূরণের গল্প বাতিঘরের ‘অঙ্কুর’ সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘কাজটির শুরু হয় একটি সবল প্রশ্ন থেকে। লিউকেমিয়ায় ভুগছে এমন কিছু বাচ্চাদের আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তাদের যদি যাদু শক্তি থাকত তারা কী হতে চাইত! তারা নির্দ্বিধায় তাদের কল্পনার বিভিন্ন রূপ বর্ণনা করেছিল।

বর্ণিত চরিত্রগুলো কাল্পনিক হলেও বাচ্চারা তাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো।

বাচ্চাগুলো যে রোগ (অ্যাকিউট লিম্ফোবাস্টিক লিউকেমিয়া) বহন করছে, তা চিকিৎসাগতভাবে নিরাময়যোগ্য, তবে চিকিৎসাব্যয় বহন করা তাদের বাবা-মায়ের জন্য একটি মূল সমস্যা। এই পরিবারগুলোর সদস্যদের প্রায় সবাই এই ব্যাধির শেষ পরিণতি জানে, তবুও তারা স্বপ্ন দেখে। আশা নিয়ে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে টিকে থাকে। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাই আমাকে কাজটিকে বাস্তবে রূপ দিতে অনুপ্রাণিত করেছে। ’

লিউকেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের ইচ্ছেগুলো নিয়ে ক্যামেরায় বন্দী ২১টি আলোকচিত্র ধরা দিয়েছে মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রাজধানীর বনানীতে ‌‘অঙ্কুর’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে। সেসব ছবির পাস দিয়েই ছবির কারিগর ফারহানা সেতুর বর্ণনায় লেখা এই কথাগুলো। মূলত লিউকেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ ইচ্ছেগুলো পূরণের সময়টাই তুলে ধরা হয়েছে এসব আলোকচিত্রে।

দেয়ালজুড়ে আরও আছে- ‌‘বাচ্চাগুলোর দেখা স্বপ্নগুলোর একটি পরিণতি আছে। যেমন, রূপক চায় ডানা মেলে উড়ে চলে যেতে এমন কোন জায়গায় যেখানে তার যন্ত্রণার সমাপ্তি হবে। বাচ্চারা আমার কাছে তাদের হৃদয় ঢেলে দিয়েছিল এবং আমাকে বলেছিল তারা কে কী হতে চায়। তাদের ইচ্ছেগুলো আমি আদেশস্বরূপ গ্রহণ করেছিলাম।

পোশাক সংগ্রহ এবং তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল আমার জন্য একটি আবেগময় সফর। যতদিনে আমি প্রজেক্টটির কাজ শেষ করে আনলাম, প্রিয় আত্মাদের অনেকেই ইতোমধ্যে স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। আমি আশা করি তারা যেখানে যেতে চাইতো সেখানে এখন ঠিকই পৌঁছেছে। আমার এই কাজের আলোকচিত্রগুলো এখন তাদের অস্তিত্বের সাক্ষ্য বয়ে বেড়াবে। ’

প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যাবে, আক্রান্ত শিশুদের স্বপ্ন ও দর্শনের প্রতিচ্ছবি প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন আলোকচিত্রী।

শিশুদের কষ্ট বা অবহেলার ব্যাপারে আমরা অনেকেই বোধগম্য নই কিংবা সচেতন নয়। ঢাকাভিত্তিক ফটো সাংবাদিক ও ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফার ফারহানা সেতু শিশুদের মনের অন্তস্থলে রেখে দেওয়া লালিত এবং চাপা স্বপ্ন আমাদের সম্মুখে হাজির করেছেন। যেখানে বাচ্চারা মনে মনে নিজেদের ধারণ করে অন্য একটি মাত্রায়। ফারহানা সেতুর এই আলোকচিত্রগুলো আমাদেরকে বাচ্চাদের দুর্দশা কিংবা দুঃখ দেখায় না। বরং দেখায় কিছু নরম মনের প্রতিফলন। যা হয়ত এতদিন সেই শিশুটি ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারেনি। আলোকচিত্রগুলো আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। বুঝতে শেখায় যে আমরা শিশুদের সঙ্গে অন্য মাত্রায় গিয়ে কিভাবে মিশতে পারি। তাদের হাত ধরতে পারি। হয়ত এই শিশুটি কিছু দিন পর পৃথিবীতে আর তার ছায়া নিয়ে বিচরণ করবে না। তবে তারও কিছু স্বপ্ন ছিল, যেমন কোমল মনেরও কিছু দর্শন থাকে।

বনানীর এশিয়াটিক সেন্টারের ‘বাতিঘর- স্মৃতিতে স্মরণে আলী যাকের’ -এ অনুষ্ঠিত (বাড়ি: ৬৩, রোড: ৭/বি, ব্লক: এইচ) প্রদর্শনী নিয়ে এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল সাংস্কৃতিক ও মানবহিতৈষী বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা। আলী যাকের সম্পর্কে আপনারা জানেন, তিনি একদিকে বিজ্ঞাপন জগতের একজন দিকপাল ছিলেন। অন্যদিকে নাটকের জগতেও তিনি একজন পথপ্রদর্শক ছিলেন।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যপ্রদর্শন আলী যাকেরের হাত ধরেই শুরু হয়। গাড়ি নিয়ে গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়ানো এবং বুনো ফুলের ছবি তোলা ছিল তার নেশা। আমি অন্তত তাকে নানাভাবে দেখেছি। এসবের ভেতর থেকে যে মানুষটা সবচেয়ে বড় হয়ে ওঠে, তা হলো একজন মুক্তিযোদ্ধা আলী যাকের। এই দেশ এবং দেশের মানুষকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। তিনি সব সময় তার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে থেকে মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা কিছু কাজ করার চেষ্টা করছি। আজকের প্রদর্শনী তার মধ্যে অন্যতম।

প্রদর্শনীর বিষয়ে মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইরেশ যাকের বলেন, বাতিঘরে উন্মুক্ত গ্যালারি বানানোর পেছনে আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটা হলো বাংলাদেশ কিংবা ঢাকা শহরে এখন নতুন এবং সম্ভাবনাময় শিল্পী, যেমন আলোকচিত্রী বা ভাস্করদের স্বল্প বা বিনা খরচে নিজেদের কাজ সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ নেই। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে অনেক কিছুই ভার্চ্যুয়াল জগতে হচ্ছে, তারপরও শিল্প প্রত্যেকের জন্য সশরীরে এসে দেখাটাই জরুরি। আমরা বাতিঘরের মাধ্যমে তরুণ এবং প্রতিভাবান শিল্পীদের জন্য এমন সুযোগ নিশ্চিত করতে চাই। সেলক্ষ্যেই আমরা অঙ্কুরের আয়োজন করেছি। এটাই শেষ নয়, আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে বাতিঘর এবং বাতিঘরের বাইরে তরুণ ও প্রতিভাবান শিল্পীদের দক্ষতা প্রকাশে আরও কিছু প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারব।

রোববার (২০ নভেম্বর) বাতিঘরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রদর্শনীর বিস্তারিত তুলে ধরেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।  

সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী ফারহানা সেতু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিউকেমিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. রুমানা দোলাসহ প্রদর্শনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।  

প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০২, ২০২২
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।