ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘অনেক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, চাইতে লজ্জা লাগে’

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
‘অনেক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, চাইতে লজ্জা লাগে’ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ারুল হক রফিক

ময়মনসিংহ: ‘অনেক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আরও চাইতে লজ্জা লাগে’- এমনই সরল উক্তি ব্যক্ত করেছেন হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ারুল হক রফিক (৭০)।

তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছে অপরারেশন না করলে জীবন সংকটাপন্ন হতে পারে।

কিন্তু চিকিৎসা করতে লাখ টাকা দরকার। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতি মাসে যা ভাতা পাই, তা দিয়ে কোনও মতে সংসার চলে। এখন টাকা ছাড়া চিকিৎসা করতে পারছি না।  

‘এ অবস্থায় একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও কাছে চাওয়ার জায়গা নেই আমার। বিষয়টি লজ্জার হলেও আমি অসহায়’-বলেই হাসপাতালের বেডে বিমর্ষ হয়ে পড়েন সত্তোরোর্ধ্ব এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।     

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩টায় ময়মনসিংহ শহরের স্বদেশ হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার কামাসাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার।

এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজের চিকিৎসায় সহযোগিতা কামনা করে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। জানান, মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকাময় নানা গল্প।  

আনোয়ারুল হক রফিক বলেন, ‘১৯৭০ সালে খুব অল্প বয়সেই পুলিশ সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই সিলেট পুলিশ লাইনে থাকা অবস্থায় শুরু হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। একদিন হঠাৎ পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণে চোখের সামনে সেখানে শহীদ হয় ৮ পুলিশ সদস্য। ’

‘এরপর আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও শত ভয় উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১১নং সেক্টরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। টানা নয় মাসের যুদ্ধে সহযোদ্ধা অনেকেই শহীদ হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই আমি। এরপর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে সিলেট পুলিশ লাইনে পুনঃরায় চাকরীতে যোগদান করে দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে বিগত ২০০০ সালে অবসর গ্রহণ করি’, যোগ করেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল হক আরও বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক সরকার এসেছে-গেছে। কিন্তু শেখ হাসিনার মত আর কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের মনে রাখেনি। তার উদারতার কারণেই আজ মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পাচ্ছে। আমি কৃতজ্ঞ বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে। কিন্তু এখন অসহায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিকিৎসার সহযোগিতা কামনা করছি। এর বেশি আর চাওয়ার নেই।

জানা যায়, আনোয়ারুল হক দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের জনক। নিজের জমিজমা যা ছিল তা বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। এর মধ্যে বড় ছেলে একটি বেসরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত থাকলেও বাকিরা এখনও অধ্যয়নরত।

এ অবস্থায় নিজের চিকিৎসার জন্য বিক্রি করার মত তার কাছে অবশিষ্ট আর কোনও জমি-জমা নেই বলেও জানান হাসপাতালে শয্যাশায়ী দেশের এই বীর সন্তান।  

এ সময় পাশে বসে থাকা আনোয়ারুল হকের সহধর্মিনী হাফসা বেগম (৬২) বলেন, অনেকদিন ধরে হার্টের অসুখে ভুগছেন তিনি। সেইসঙ্গে গত কিছুদিন ধরে তার মূত্রথলিতে মাংস বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। গত ১৬ নভেম্বর ডাক্তার দেখিয়েছি। তারা বলেছে, এখন চিকিৎসা না করলে বড় ধরণের সমস্যা হতে পারে।  

‘কিন্তু চিকিৎসা করার মতো টাকা আমাদের নেই। এই অবস্থায় আমি আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চাই। শুনেছি উনি কাউকে ফিরিয়ে দেন না। ’

তবে এই মুক্তিযোদ্ধার আর্থিক সংকটের বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া পারভেজ।

তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তবে তিনি আর্থিক সংকটে আছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি উনি বা পরিবারের কেউ আমাদের কাছে আসেন, অবশ্যই আমরা তাকে সহযোগিতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এমএইউএ/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।