ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ফেনীতে মানববন্ধন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২২
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ফেনীতে মানববন্ধন

ফেনী: নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আর্ন্তজাতিক দিবসে ফেনীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সকালে শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, সিনিয়র সাংবাদিক আরটিভির জেলা প্রতিনিধি এম এইচ আজাদ মালদার।

গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ ও ‘হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস নেটওয়ার্ক’র যৌথ আয়োজনে দিবসের মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন গুমের শিকার হওয়া যুবদল নেতা মাবুবুর রহমান রিপনের মা রৌশন আরা বেগম।  

মায়ের ডাক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস নেটওয়ার্ক’র কো-অর্ডিনেটর, অধিকার ফেনীর ফোকাল পার্সন ও দৈনিক মানবজমিন’র জেলা প্রতিনিধি নাজমুল হক শামীমের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, দৈনিক প্রভাত আলো'র নির্বাহী সম্পাদক সৌরভ পাটোয়ারী, ইয়ুথ জার্নালিস্টস ফোরাম বাংলাদেশ'র ফেনী জেলা সভাপতি ও দৈনিক অজেয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক শাহজালাল ভূইয়া, বাংলাদেশ ফটোজানালিষ্ট এসোসিয়েন এর ফেনী জেলার সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল বুলবুল, মাসিক আঁচল পত্রিকার সম্পাদক সাহিদা সাম্য লিনা, আলাপন আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম ফরায়েজী, মানবাধিকার সংগঠক ও শিক্ষক এমডি মোশাররফ, প্রথম আলো ফেনী বন্ধু সভার সাধারণ সম্পাদক বিজয় নাথ, গুমের শিকার হওয়া যুবদল নেতা মাবুবুর রহমান রিপনের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান, মেঝ ভাই মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

মানববন্ধন ও সমাবেশে গুমের শিকার রিপনের চাচা ওহিদুর রহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও মানবাধিকার কর্মী কাজি ইকবাল আহমেদ পরান, ফেনী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলী নসুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।

দিবসের মুল প্রবন্ধে বলা হয়, ১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর ডোমেনিকান রিপাবলিকের তিনজন নারী রাজনৈতিক কর্মীকে সেই দেশের শাসক হত্যা করে। এর প্রতিবাদে ১৯৮১ সাল থেকে ২৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নারী অধিকার কর্মীরা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিকদিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।  

২০০০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এ দিনটি পালনের জন্য রেজুলেশন গ্রহণ করে। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না হওয়া, অকার্যকর বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসনের দুর্নীতি, সামাজিক মুল্যবোধের অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধীরা ক্রমাগত দায়মুক্তি পেয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে নারীদেরপ্রতি সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নারীরা পারিবারিক সহিংসতা, যৌতুক সহিংসতা, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া বাল্যবিবাহের কারণে অনেক মেয়ে শিশুর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।  

বাংলাদেশে নারীদের প্রতি সহিংসতার পাশাপাশি গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের নারী সদস্যদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গুম মানবতাবিরোধী অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে গুমের অভিযোগগুলো নিয়মিতভাবে প্রকাশ পেতে থাকে, যা ২০১৩ সাল থেকে ব্যাপক আকার ধারণ করে।  

“তথ্য গোপন করছেন” এমন বাক্য লেখা কাগজে সই নেয়ার জন্য গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের নারীসদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ, বাসায় গিয়ে তাঁদের জেরা করা, থানায় ডেকে পাঠানো এবং ক্ষেত্র বিশেষে সাদা কাগজেসই নেয়াসহ বিভিন ধরণের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে।

এছাড়া সরকারদলীয় ব্যক্তিরা গুমের শিকার পরিবারের নারী ও কন্যা শিশুদের ছবিকে ফটোশপ করে উক্ত নারী ও কন্যা শিশুদের নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃন্য প্রচারণা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা গুমের শিকার ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনদের প্রতি ‘প্রতিশোধমুলক কর্মকাণ্ড বন্ধে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অধিকার ও মায়ের ডাক গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের নারী সদস্যদের ওপর নিপীড়ন বন্ধসহ সমাজে নারীর প্রতি সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের লক্ষ্যে মায়ের ডাক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারর্স নেটওয়ার্কের সুপারিশ সমুহ হলো- ১) গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের নারী সদস্যদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে, ২) বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে ও নারীর প্রতি সহিংসতার মামলা গুলোর দ্রুত বিচারেরব্যবস্থা করতে হবে; ৩) নারীর প্রতি সহিংসতার মামলাগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা যাবে না; ৪) প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম, পাঠ্যবইসহ সর্বস্তরে দীর্ঘকালীন সচেতনতামুলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে; ৫). সহিংসতার শিকার নারী ও সাক্ষীর নিরাপত্তার জন্য আইন করে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২২
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।