ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

‘বাংলাদেশকে দেখো’

শিহাবউদ্দীন কিসলু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৪
‘বাংলাদেশকে দেখো’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নিউইয়র্ক: ‘বাংলাদেশকে দেখো’- সুজলা-সুফলা-শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ। ক্ষুদিরাম, তীতুমীর, সূর্যসেন থেকে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুল যে মাটির সন্তান সে বাংলাদেশ ঝড়ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষ কিংবা সংক্ষুব্ধ রাজনীতির দেশ নয়।



অনেক প্রতিভায় উদ্ভাসিত অমিত সম্ভাবনার দেশ। বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ-‘বিশ্বের বিস্ময়’ হয়ে দুর্লভ সৌন্দর্য আর অপরাজেয় শক্তির ক্ষিপ্রগতির রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আর তাইতো ৬ বছরের শিশুর কণ্ঠ গেয়ে উঠলো-  ‘রক্তের দামে কিনেছি মোর স্বাধীন স্বদেশ বাংলাদেশ...। ’

গর্বের এই বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে ‘আইজ অন বাংলাদেশ’ শিরোনামে কয়েক তরুণ-তরুণীর চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় নিউইয়র্কে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন তাদেরই একজনের মা।

‘আইজ অন বাংলাদেশ’ স্লোগানের প্রথম কর্মসূচি-  ‘প্রদর্শনী। ’ শুধুই দেশকে ভালোবেসে কোনো সংগঠন নয়, ‘বাংলাদেশকে দেখো’ (আইজ অন বাংলাদেশ) স্লোগানে  প্রবাসে মূলধারায় অহঙ্কারে নিজের দেশকে তুলে ধরতেই আকুলতা কয়েক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে এ মায়ের।

বিশাল গ্যালারিতে যেদিকেই চোখ যায়, শুধু বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। চিরায়ত আবহমান বাংলা। ফসলের মাঠ। কৃষকের হাসি, কর্মঠ নারী, স্নেহমাখা শৈশবের তুলনাহীন বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্য।

আছে গৌরবগাথা ইতিহাস-ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার মন্ত্রে বাঙালির  বিজয় গাথা। সাত সাগর তেরো নদী পাড়ে আটলান্টিকের শহর নিউইয়র্কে বাংলাদেশ পরিচিত করা হলো তার আপন ঐতিহ্যে।  

মহান স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে ২ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পাঁচদিনব্যাপী এ চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী জয় করেছে জাতি-ধর্ম-বর্ণকে।

বাঙালি ছাড়াও বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর শিশু-কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের আলোর ছটায় আলোকিত হয়েছে সুবিশাল গ্যালারি কক্ষ।
  
আমেরিকায় নতুন প্রজন্মের চার বাংলাদেশি তরুণ-তরুণী নাবিল, তাহিতুন, জাফর ও আয়েশা। এদের সঙ্গে আছেন তাদের এক মা সাজিয়া রহমান।

একটি ব্যতিক্রমী ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন তারা এস্টোরিয়াতে সাউন্ড ভিউ কর্পোরেশেনের আর্ট গ্যালারিতে।  

বাংলাদেশের ইতিবাচক অনেক কিছু যে আছে, তা বিশ্বব্যাপী নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াই এর মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও রয়েছে প্রবাসে বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের পারিবারিক বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করা।

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু মুক্তির গান ছবির চিত্রগ্রাহক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক লেয়ার লেভিন। বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে বলেন, মুক্তিযদ্ধের সময় একদিন আমি সারাবিশ্বকে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছিলাম। আজ সেই কাজটিই  করছে প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণেরা।

প্রদর্শনীর আয়োজক বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের অভিবাদন জানিয়ে তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ অনেক বেশি সমৃদ্ধ। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছে।

নিউইয়র্কে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করে বর্তমানে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে কর্মরত নাবিল রহমান ‘আইজ অন বাংলাদেশ’-এর মূল উদ্যোক্তা।

নাবিল বলেন, বাংলাদেশকে সঠিকভাবে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করাই আমাদের লক্ষ্য।

কথা হলো, তাহিতুন মারিয়াম আর জাফর আহমেদের সঙ্গেও। তারা দুজনে বলেন, আমাদের গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে। আছে মুক্তিযুদ্ধ, যেখানে মেয়েরাও দেশের জন্য অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। অনেক তরুণ প্রতিভা দেশে বিদেশে সাফল্যকে হাতের মুঠোয় এনে বাংলাদেশেকে পরিচিত করিয়েছেন নতুনভাবে।

এছাড়াও উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বে মডেল আজ আমাদের বাংলাদেশে। অথচ আমেরিকায় মূলধারায় সে খবর প্রায় অজানা। বাংলাদেশিরা নিজেদের মধ্যেই সব কিছু করে। এভাবে প্রবাসে বাংলাদেশকে পরিচিত করে তোলা কঠিন। আমরা মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে চাই। নতুন প্রজন্মের কাছে এই বার্তাই আমরা তুলে ধরছি। নতুন প্রজন্মকে আগ্রহী করে তুলছি।

টানা ৫ দিনব্যাপী প্রদর্শনীর পর রোববার শেষ হলো নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক জেমস এস্ট্রিন চিত্রগ্রাহক ওবায়দুল্লাহ মামুন এবং সাউথ এশিয়ান জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশেনের প্যানেল আলোচনা আর শিশুদের সাংস্কৃতিক পর্বের মধ্য দিয়ে। শিশু শিল্পীর  কণ্ঠে ‘রক্তের দামে কিনেছি মোর স্বাধীন স্বদেশ বাংলাদেশ’- চেতনাকে আঘাত করে গেল আরেকবার।  

উল্লেখ্য, প্রদর্শনী চলাকালে প্রতিদিনই বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ