ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

নিউইয়র্ক

সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ‘পিপলস মার্চ’

শিহাবউদ্দীন কিসলু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৪
সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ‘পিপলস মার্চ’ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নিউইয়র্ক: সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নিউইয়র্কে হয়ে গেলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় র‌্যালি ‘পিপলস ক্লাইমেট মার্চ’।

বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও  শ্রমিক সংগঠন এবং সামাজিক ন্যায় বিচার বিষয়ে কর্মরত এক ডজনেরও বেশি সংগঠন এই ‘পিপল’স ক্লাইমেট মার্চ’ র‌্যালির আয়োজন করেন।

 

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা থেকে এ র‌্যালি শুরু হয়।
 
র‌্যালিতে অংশ নিতে সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে হজার হাজার মানুষ জড়ো হতে থাকে সেন্ট্রাল পার্ক ও সেন্ট্রাল পার্ক ওয়েষ্ট সড়কের প্রায় এক মাইল এলাকাজুড়ে। বাদ্যযন্ত্র, বাঁশি, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের নেতা, ইউনিয়ন সদস্য, পরিবেশ বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষার্থীরা।
 
লাখো মানুষের র‌্যালি ‘পিপলস মার্চ’ থেকে নিউইয়র্কের মেয়র বিল ব্লাজিও সরকারি সব ভবনকে এনার্জি এফিসিয়েন্সি বিল্ডিংয়ের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন।

তার এই পরিকল্পনা ঘোষণার সময় র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন- জাতিসংঘের মহাসচিব বানকি মুন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, অবিনেতা লিওনো ডি ক্যাপ্রিও এবং মার্ক রাফেলো, সিনেটর চাক শুমারসহ দু’জন ইউএস সিনেটর এবং সিটি কাউন্সিলর স্পিকার মেলিসা মার্ক ভিভারিটোসহ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কাউন্সিলম্যান অংশ নেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এটাই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় র‌্যালি। আয়োজকরা বলেছে , জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব নেতারা। পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যর্থতা’র বিরুদ্ধে হতাশা ও ক্ষোভই জানান দিচ্ছে এ বিশাল র‌্যালি।

ছোট ছোট গ্রুপ ও আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনসহ ১৪শত সংগঠন এতে রেজিস্ট্রেশন করেছে এবং  ৩শ কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীরা এ র‌্যালিতে অংশ নিয়েছে।

আয়োজকরা বলেছে, এ র‌্যালি ‘রিনিউএবল রেভ্যুলেশন’র ডাক। মঙ্গলবার জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সামিটে কার্বন নিঃসরণে মাত্রা বেধে দেওয়ার জনদাবি পৌঁছে দিতে এটাই উপযুক্ত সময়। নিউইয়র্কেও এ র‌্যালির সমর্থনে প্যারিস থেকে পাপুয়া নিউগিনি সবত্রই র‌্যালি হয়েছে।

নিউইয়র্কের এই র‌্যালির সমর্থনে দিল্লি, জাকার্তা লন্ডন, মেলবোর্ন, রিও ডি জেনেরিওসহ  বিশ্বের ১৫৮টি দেশে ২ হাজার ৭শ জলবায়ু বিষয়ক কর্মসূচি পালিত হয়েছে একই সঙ্গে।

এই র‌্যালিকে দর্শনীয় ও সফল করে তুলতে বিভিন্ন দেশ থেকে চিত্রকর নিউইয়র্কে এসেছেন। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে তারা এ র‌্যালির প্রস্তুতিতে কাজ করেছে। এই র‌্যালির সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে কলোম্বাস সার্কেল থেকে শুরু হয়ে ৫৯ স্ট্রিট দিয়ে ৬ এভিনিউ হয়ে ৪২ স্ট্রিট ধরে ১১ এভিনিউ এবং ৩৪ স্ট্রিটে গিয়ে ২ মাইল সড়ক প্রদক্ষিণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মধ্যাহ্নে ঘড়ির কাঁটায় ঠিক একটায় এক মিনিট নীরবতার পর র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা একযোগে সেলফোন এলার্ম, হুইসেলে বাঁশি বাজিয়ে যথাসম্ভব সর্বোচ্চ আওয়াজ করে এবং ২০টি ব্যান্ডের বাদ্যযন্ত্রেও সঙ্গে সারা নিউইয়র্কেও চার্চ গুলিতেও একযোগে ঘণ্টা বাজিয়ে বলেছে ‘আমাদের ভবিষ্যত চুরি হচ্ছে’।

নিউইয়র্ক সিট কাউন্সিলের স্পিকার মেলিসা মার্ক ভিভারিটো র‌্যালিতে বাংলানিউজকে বলেন, সবুজ নিউইয়র্ক গড়ে তোলাই র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক গ্লোবাল সিটি। সুতারং আমরা যা করবো সেটা অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে এবং পার্থক্য নির্দিষ্ট করে। তাই এমন কিছু করতে চাই যা পুরো যুক্তরাষ্ট্র এমনকি বিশ্ব অনুকরণ করে। আমাদের এজেন্ডা নিউইয়র্ক সিটিকে সবুজ করে গড়ে তোলা, সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলা।

র‌্যালিতে অংশ নেওয়া কানাডা থেকে আগত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ফাতিন ইশরাত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে বাংলাদেশ। শুধু কানাডা নয় বাংলাদেশকেও প্রতিনিধিত্ব করতে এ র‌্যালিতে যোগ দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদেও এই উদ্বেগকে ভাষা দিতে হবে। জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবেলায় নিজেদেরকে সক্ষম করে তোলার বিষয়ে বাংলাদেশের সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

সবচেয়ে বড় মিউনিসিপ্যালিটি কর্মচারী ইউনিয়ন ডিসি-৩৭ এর সদস্যরা র‌্যালিতে অংশ নিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শক্তিশালী ইউনিয়ন এই র‌্যালিতে অংশ নিয়েছি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র সিনেটসহ সারা বিশ্বের কাছে একটিই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, আমরা ক্লান্ত। জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে বিশ্ব নেতাদেরকে।

র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা এসময় বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা বলেন- পৃথিবী ছাড়া ‘প্লানেট বি’ নেই, বনরাজি বিক্রয়ের জন্য নয়, চাকরি, সুবিচার ও পরিস্কার জ্বালানি চাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগানের ব্যানার আর কন্ঠে ‘গণতন্ত্র কেমন? গণতন্ত্র এই র‌্যালির মতো এমন’ এসব স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল লাখো মানুষের ঢল। ৫শ বাস সাউথ ক্যারোলিনা , ক্যানসাস, মিনেসসোটা এবং কানাডা থেকে অংশ নেয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ