ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নিউইয়র্ক

শিক্ষা কারিক্যুলামে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত জরুরি

শিহাবউদ্দীন কিসলু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৪
শিক্ষা কারিক্যুলামে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত জরুরি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নিউইয়র্ক: বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মানসিক চিকিৎসার অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা হোসেন পুতুল বলেছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে  সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতি, স্বাস্থ্যনীতিসহ বিশেষ  করে শিক্ষা কারিক্যুলামে মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সেবার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস (০৩ ডিসেম্বর) উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) ‘মেন্টাল ওয়েলবিইং, ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।



সাড়ে ১৪ কোটি মানুষের বাংলাদেশে একটি মাত্র স্পেশালাইজড মানসিক হাসপাতাল এবং মাত্র দুইশ মনোচিকিৎসক রয়েছেন উল্লেখ করে সায়মা হোসেন পুতুল বলেন, এ সরকারের উদ্যোগে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে মাত্র দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদান কর্মসূচি চলছে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক জরুরি। পাশাপাশি অন্য চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা, ‘মনোরোগ পরামর্শক’ আর ‘চিকিৎসক’ এক নয়।

বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের প্রশংসনীয় উদ্যোগের কথা ও তথ্যউপাত্ত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা।  

বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার যৌথ সহায়তায় এ সেমিনারে গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা হোসেনসহ প্যানেল আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আর্জেন্টিনার স্থায়ী প্রতিনিধি মারিয়া ক্রিস্টিনা পার্সেভাল, জাতিসংঘ গ্লোবাল হেলথের কো-অর্ডিনেটর ড. আটসুরো সুটসুমী, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞানী ড. মার্ক ভেন ওমেরেন, মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেরি মিনাজ, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি রিসার্স ইনস্টিটিউটের ড. কামাল লেমিচেনি, ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর রিসার্স অ্যান্ড এডুকেশন অন ডিপ্রেশনের কেথরিন গুয়েটজকি ও টোকিও বিশ্বব্যাংক লার্নিং সেন্টারের ড. তাকাশি ইজুটসু এবং মোটিয়ো এস্ট্রিম ও লরা উপাস।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতিসংঘের সেক্রেটারিয়েট ফর দ্য কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব পার্সন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজের চিফ আকিকো ইটো।

মোটিয়ো এসি ট্রম বলেন, বিশ্বের উন্নয়নের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

ড. আটসুরো সুটসুমী বলেন, মানসিক অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধীদের মানবাধিকার আজ মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধে যত মানুষ নিহত হচ্ছেন তার চেয়ে আত্মহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে গেছে।  

ড. কামাল লেমিচেনি (প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি) বলেন, সঠিক চিকিৎসা ও সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধীরা কেবল মানব সম্পদেই পরিণত হবে না, বিশ্বের উন্নয়নে অনেকের চেয়েই অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবেন।

অধ্যাপক হেরি মিনাজ সায়মা হোসেন পুতুলের বক্তব্যের প্রশংসা করে তার বক্তব্যের বিশ্লেষাণত্মক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা পলিসি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের তৃণমূল পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

কেথরিন গুয়েটজকি তার নিজের জীবনে আত্মহত্যার চেষ্টা  থেকে বেঁচে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, মানসিক অসুস্থদের চিকিৎসা সেবা কত জরুরি তার প্রমাণ আমি নিজে। আমি মাস্টার্স শেষ করে বড় কাজে সাফল্য পেয়েছি এবং ১০ বছর বয়স থেকেই মানসিক অসুস্থদের সেবায় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, বর্তমানে বিশ্বে যুদ্ধে নিহতদের সংখ্যার চেয়ে মানসিক অসুস্থতায় মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। এছাড়া ২০১০ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যখাতে বিশ্বের ব্যয় হবে ৪৭ ট্রিলিয়ন ডলার। অথচ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা বিশ্বের উন্নয়ন অবদানে মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ